মৃত্যুর পর হাসপাতালের বিল দেননি নিয়োগকর্তা; আড়াই বছর পর দেশে ফিরছে ব্রুনাই প্রবাসীর লাশ
গিয়েছিলেন সুদিনের আশায়, কিন্তু নিয়তির ফেরে হৃদেরাগে আক্রান্ত হয়ে বিদেশের হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
হাসপাতালের মর্গে তারপর নিষ্প্রাণ কেটে যায় প্রায় আড়াই বছর। অবশেষে দেশে আনা হচ্ছে তার মরদেহ।
এনজিও ও স্থানীয়দের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ২০২০ সালের মাঝামাঝি ব্রুনাই গিয়েছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শাহজিরা গ্রামের শিপন হাওলাদার।
দুই বছর সেখানে মালি হিসেবে কাজ করেন ৪৪ বছর বয়সি এ বাংলাদেশি। ২০২২ সালের শুরুর দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি।
এরপর ব্রুনাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিপন মারা যান। কিন্তু নিয়োগকর্তা হাসপাতালের কোনো বিল পরিশোধ করেননি।
'আমার স্বামীর মালিক [নিয়োগকর্তা] ভালো ছিল না। মারা যাওয়ার পরও সেখানে [স্বামী] লাশ হয়ে পড়ে ছিল দুই বছরের বেশি,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন শিপন হাওলাদারের স্ত্রী খোরশেদা বেগম।
হাসপাতালের শিপনের চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১৬ লাখ টাকা বিল ওঠে। 'সামর্থ্য না থাকায় নিজ খরচে আমরা লাশটাও দেশে আনতে পারিনি,' বলেন খোরশেদা।
পরে তার মরদেহ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করে। সে প্রেক্ষিতে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস উদ্যোগ নেয়।
শিপন হাওলাদারের নিয়োগকর্তা ভাল ছিল না জানিয়ে দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, 'শিপন মারা যাওয়া অবস্থায় আনডকুমেন্টেড [নথিপত্রহীন] থাকায় তার হাসপাতালের প্রায় ১৬ লাখ টাকা বিল নিয়োগকর্তা পরিশোধ করেননি। এজন্য ইনস্যুরেন্স দাবিও করা যায়নি।'
ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের হাই কমিশনারের চেষ্টায় হাসপাতালের বিল মওকুফের ব্যবস্থা হয়। এখন সরকারি খরচে শিপনের মরদেহ দেশে আনা হচ্ছে।
'আমাদের রাষ্ট্রদূত ম্যাডাম অনেক চেষ্টা করে হাসপাতালের বিল মওকুফের ব্যবস্থা করেছেন। ব্রুনাই থেকে লাশ আনতে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা লাগে। সেই টাকাও নিয়োগকর্তা দেয়নি,' বলেন আবু বক্কর সিদ্দিক।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টাকায় মরদেহ আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিপুল পরিমাণ বিল আটকে থাকা ও নিয়োগকর্তা ভালো না হওয়ার কারণেই মূলত লাশ আনতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়।'
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে বারোটায় শিপনের মরদেহ ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।