অঞ্চল ও ব্যাপ্তিতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে চলমান তাপপ্রবাহ
গত দুই দশকে প্রায় প্রতিবছরই টানা তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকা। ২০১৯ সালের এপ্রিলে চুয়াডাঙ্গায় টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল, তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে।
কিন্তু এ বছর এপ্রিলের ১ তারিখ থেকেই দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ২৬ দিন অতিক্রম করে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। পাশাপাশি বিগত বছরগুলো থেকে এবারে তাপপ্রবাহের প্রভাবের স্থান অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন স্টেশনের তথ্য-উপাত্ত আছে। সেগুলো বিশ্লেষণে ও আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোর তাপপ্রবাহের সকল রেকর্ড এবারে ভেঙে গেছে।'
গত ৭৬ বছরের মধ্যে টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ এবারই প্রথম ঘটেছে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
দীর্ঘদিন ধরে তাপপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করা মল্লিক বলেন, 'এবারের তাপপ্রবাহ দেশের ৭৫ ভাগেরও বেশি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা নজিরবিহীন। ৫০টিরও বেশি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।'
'২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসে টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। গত বছর এপ্রিলে টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। তখন তাপপ্রবাহ এত ব্যাপক পরিসরেও ছিল না,' বলেন তিনি।
বিগত ৪৩ বছরের মধ্যে যশোরে তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি দিন ঘটেছে। এরপরই আছে ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা। তাপপ্রবাহের সময় দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন।
দ্য রিজিয়নাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি-হ্যাজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ফর আফ্রিকা অ্যান্ড এশিয়া (রাইমস)-এর আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ খান মো. গোলাম রব্বানী টিবিএসকে বলেন, বর্তামনে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে প্রতি বছরের তাপমাত্রা তার আগের বছরের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে ব্যপ্তিকাল কম থাকায় তাপপ্রবাহ বড় সমস্যার কারণ হয়ে ওঠেনি। আগামী বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে তাপপ্রবাহের ব্যপ্তিকাল ও প্রভাব অঞ্চল বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, '১৯৬৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যশোরে। আর ১৯৮৯ সালে বগুড়ার তাপমাত্রা হয়েছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ৪ এপ্রিল আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রথম হিট অ্যালার্ট জারি করে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ষষ্ঠবারের মতো এ সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মো. গোলাম রব্বানী বলেন, 'এল নিনোর ফলে এখন দেশের তাপমাত্রা শীর্ষে রয়েছে। এর পরে লা নিনো আসার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে অতিবৃষ্টিরও সম্মুখীন হতে পারে বাংলাদেশ।'
এল নিনো এমন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যেখানে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণপৃষ্ঠের পানি বায়ুমণ্ডলে এর অতিরিক্ত তাপ ছেড়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদী মানব সৃষ্ট উষ্ণায়নের ফলে এ প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ সৃষ্টি হয়েছে।