হিটস্ট্রোক: উচ্চ তাপমাত্রায় কেউ জ্ঞান হারালে কী করবেন?
তীব্র তাপপ্রবাহে দেশে সপ্তমবারের মতো আবহাওয়া অধিদপ্তরের জারি করা 'হিট অ্যালার্ট' চলছে। গতকাল (২৯ এপ্রিল) দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমে সর্বোচ্চ। এরইমধ্যে অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকে দেশজুড়ে কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ফলে চিকিৎসকরা গরমে হিটস্ট্রোকের ব্যাপারে সতর্ক করছেন।
হিটস্ট্রোকের ফলে যে কারও আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে। যখন মূলত শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীর ঠান্ডা করার কোনো উপায় থাকে না– তখনই হিটস্ট্রোক হয়। চিকিৎসকদের মতে, হিটস্ট্রোকে মৃত্যু থেকে বেঁচে গেলেও এটি ভুক্তভোগীর মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। তাই, এই অতিরিক্ত গরমে যদি কারও মধ্যে হিটস্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস নাও- এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হিটস্ট্রোকের কারণ, ধরন ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
হিটস্ট্রোকের কারণ
চিকিৎসকদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, অর্থাৎ তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকলে হিটস্ট্রোক হতে পারে।
মেডিকেলের ভাষায়, শরীরের মূল তাপমাত্রা যখন ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তখনই মূলত হিটস্ট্রোক ঘটে। এ সময় উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসার কারণে স্নায়ুতন্ত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
হিটস্ট্রোকের ধরন
হিটস্ট্রোক মূলত দুই ধরনের—
একজোরশনাল হিটস্ট্রোক: এ ধরনের হিটস্ট্রোক সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় অধিক শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হয়ে থাকে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ ধরনের হিটস্ট্রোক হতে পারে।
নন- একজোরশনাল হিটস্ট্রোক: এটি ক্লাসিক হিটস্ট্রোক নামেও পরিচিত। এ ধরনের হিটস্ট্রোক মূলত বয়স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে হয়ে থাকে এবং এটি ঘটতে কয়েকদিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ
- হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়া
- জ্ঞান হারানো
- বমি বমি ভাব
- মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ও বিভ্রম
- পানিশূন্যতা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
- প্রচণ্ড পানির পিপাসা
- জিহ্বা শুকিয়ে ফুলে যাওয়া
- খিঁচুনি হওয়া
- অতিরিক্ত ঘাম এবং ঠান্ডা অনুভূত হওয়া
- পালস দ্রুত কমে যাওয়া
হিটস্ট্রোক মোকাবেলার উপায়
হিটস্ট্রোক মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সবার আগে ভুক্তভোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। তাপমাত্রা অন্তত ১০১-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নামিয়ে আনতে হবে।
একইসঙ্গে নিচে উল্লিখিত কাজগুলো করা যেতে পারে—
- স্পঞ্জের বেগে পানি নিয়ে রোগীর ত্বক ভিজিয়ে দিতে হবে; একইসঙ্গে ফ্যানের বাতাস চালু রাখতে হবে।
- যদি রোগীর জ্ঞান থাকে এবং গিলতে পারেন, তবে তাকে পানি বা ইলেক্ট্রোলাইটযুক্ত স্পোর্টস ড্রিংক পান করাতে হবে।
- রোগীর বগল, কুঁচকি, ঘাড় এবং পিঠে বরফের প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ শরীরের এই অংশগুলোতে রক্তনালী চামড়ার একদম নিচেই থাকে, ফলে এই অংশগুলোতে বরফ দিতে শরীর দ্রুত ঠান্ডা হবে।
- রোগীর শরীর ঝরনার নিচে বা ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখা যেতে পারে।
- রোগীকে ১২ ইঞ্চি উঁচুতে পা রেখে বসাতে বা শোয়াতে হবে। এতে করে রোগীর পা ফুলবে না এবং এটি মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হতে সাহায্য করবে।