তীব্র ঝাঁকুনির কবলে পড়া সিঙ্গাপুরগামী বোয়িং ৭৭৭ বিমানের যাত্রীরা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিল
লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তীব্র ঝাঁকুনিতে একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছে।
সিঙ্গাপুরগামী বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমানের এসকিউ ৩২১ ফ্লাইটটি তীব্র ঝাঁকুনির কবলে পড়ায় স্থানীয় সময় ৩টা ৪৫ মিনিটে থাইল্যান্ডে রাজধানী ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে।
সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফ্লাইটটি উড্ডয়নের প্রায় ১০ ঘণ্টা পরে ৩৭ হাজার ফুট ওপরে মায়ানমারের ইরাবদি নদীর অববাহিকা অতিক্রম করার সময় হঠাৎ 'তীব্র ঝাঁকুনি' অনুভব করে।
বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমানটিতে মোট ২১১ জন যাত্রী এবং ১৮ জন ক্রু সদস্য ছিল।
ফ্লাইটে থাকা যাত্রীরা তীব্র ঝাঁকুনির জন্য ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। ৭৩ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক জিওফ কিচেন সম্ভাব্য হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। খাবারের পরিষেবা চলাকালীন হঠাৎ ঝাঁকুনিতে আরো ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
ফ্লাইটে থাকা ব্রিটিশ নাগরিক অ্যান্ড্রু ডেভিস বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করার সময় তার চারপাশের 'ভয়াবহ চিৎকার ও শব্দের বর্ণনা' দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, "আমার সব থেকে বেশি মনে আছে, জিনিসপত্র কীভাবে চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছিল। এটি ছিল ভয়াবহ ঝাঁকুনি।"
ফ্লাইটে থাকা ২৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী জাফরান আজমির বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বিমানটি হঠাৎ "কাত হয়ে যেতে থাকে এবং ঝাঁকুনি শুরু হয়।"
তিনি বলেন, "হঠাৎ করে খুব নাটকীয়ভাবে মোড় নেয় বিমানটি। সিটবেল্ট না পরা প্রত্যেকে সেসময় সিলিংয়ের সঙ্গে জোরে ধাক্কা খায়।"
আজমির আরো বলেন, "কারো কারো মাথা প্রচণ্ড জোরে ব্যাগেজ কেবিনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সেগুলো ছিড়ে মাথা ভেতরে ঢুকে যায়।"
অ্যালিসন বার্কার নামে এক ব্যক্তিকে ফ্লাইটে থাকা তার ছেলে জশ একটি বার্তা পাঠিয়েছিল যাতে লেখা ছিল, "আমি তোমাকে ভয় দেখাতে চাই না। কিন্তু আমি একটি ভয়ানক ফ্লাইটে আছি। বিমানটি জরুরি অবতরণ করছে।"
জশ জানিয়েছেন, তিনি সামান্য আঘাত পেলেও মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা তার ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
জেরি নামে ৬৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তার ছেলের বিয়েতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, বিমানটি হঠাৎ নেমে যাওয়ার আগে কোনো সতর্কতা দেয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, "আমি ও আমার স্ত্রীর মাথা ব্যাগেজ কেবিনের সঙ্গে ধাক্কা খাই। কিছু মানুষ ডিগবাজি খাচ্ছিল ঝাঁকুনির জন্য।"
ঘাড়ে আঘাত পাওয়া একজন জানিয়েছেন, তিনি এবং তার পরিবার 'যথেষ্ট ভাগ্যবান' কারণ তাদের কেউ মারা যায়নি।
গতকাল একটি বিবৃতিতে নিহত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছিল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স। যাত্রীদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য থাই কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সহায়তা করেছে এয়ারলাইন্সটি।
আজ বুধবার (২২ মে) এক ভিডিও বার্তায় এয়ারলাইন্সটির প্রধান গোহ চুন ফং তীব্র ঝাঁকুনিতে 'ফ্লাইটে থাকা যাত্রীদের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা' হওয়ায় তাদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
গোহ চুন ফং যাত্রী ও ক্রুদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে মিলে ঘটনার সঠিক তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন।
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং নিহতের পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি 'গভীর সমবেদনা' জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সিঙ্গাপুর থাই কর্তৃপক্ষের সাথে এ ঘটনায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
তিনি জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরের ট্রান্সপোর্ট সেফটি ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত করবে।
বিমানে ঝাঁকুনিতে আহত হওয়ার ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল। লাখের মধ্যে অল্প কিছু ফ্লাইটে এমন ইতিহাস দেখা যায়।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জন স্ট্রিকল্যান্ড বিবিসিকে বলেন, "তবে কখনো কখনো তীব্র ঝাঁকুনি হতে পারে। এতে যাত্রীরা গুরুতর আহত হতে পারে বা প্রাণহানিও ঘটতে পারে।"
গবেষণায় জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে আকাশপথে বিমানের ফ্লাইট চলাচলে তীব্র ঝাঁকুনির শঙ্কা আরও বাড়বে।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ার ইতিহাস বিরল। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এয়ারলাইন্সগুলোর একটি ধরা হয়।
সর্বশেষ মারাত্মক দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০০ সালে যখন একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান তাইওয়ানের বিমানবন্দরে ভুল রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের চেষ্টা করার সময় বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানটিতে থাকা ১৭৯ জন যাত্রী মধ্যে প্রায় ৮৩ জন নিহত হয়েছিল।