লুইস ফিগো ও ফুটবলের সবচেয়ে বিতর্কিত দলবদল
কাতালান নন তিনি, বাড়ি স্পেনেও নয়। ক্যারিয়ার গড়তে পর্তুগাল থেকে বার্সেলোনায় পাড়ি জমিয়েছিলেন লুইস ফিগো। ভিনদেশি হলেও কাতালারদের আপন মানুষ হতে বেশি সময় লাগেনি পর্তুগিজ এই কিংবদন্তির। দ্রুতই হাতে উঠে যায় অধিনায়কের আর্মব্যান্ড, হয়ে ওঠেন কাতালাদের স্বপ্নের বাহক।
খুব অল্প সময়েই বার্সেলোনার ঘরের ছেলেতে পরিণত হন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর এই অগ্রজ। ১৯৯৫-২০০০; এই সময়টায় বার্সেলোনার প্রাণভোমরা ছিলেন ফিগো। শেষ এক যুগ ধরে লিওনেল মেসিকে ঘিরে যেমন আবর্তিত হয় বার্সার সমস্ত পরিকল্পনা, তেমনি ওই ৫ বছর ফিগো ছিলেন দলটির মধ্যমনি।
দীর্ঘ যাত্রায় ফিগোকে সঙ্গী হিসেবে ধরে সামনে এগোতে চেয়েছিল বার্সোলোনা। কিন্তু ফিগোর সঙ্গে সবকিছু মনমতো হয়নি কাতালানদের। ২০০৫ সালে হঠাৎ করে বার্সেলোনা ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান তিনি। প্রথমত না বলে ক্লাব ছাড়া, দ্বিতীয় চিরশত্রুদের সঙ্গে হাত মেলানো; কয়েক মুহূর্তেই কাতালানদের কাছে নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত হন ফিগো।
কেবল কাতালানদের কাছেই নয়, বার্সার অনেক ভক্তর কাছেও ফিগো এক কালো অধ্যায়ের নাম। ফিগোর নাম শুনলে এখনও অনেকে রাগ ঝারা শুরু করে দেন। ক্লাবের সঙ্গে এতো মধুর এক সম্পর্ক কিছু না ভেবেই ছিন্ন করেছিলেন ফিগো। যে কারণে কাতালানদের কাছে এই ঘটনা যেমন 'বিশ্বাসঘাতকতার', তেমনি ফুটবল বিশ্বের কাছে এটি সবচেয়ে বিতর্কিত দলবদল হয়ে আছে।
২০০০ সালের গ্রীষ্মে ফিগোর বার্সেলোনা ছাড়ার গুঞ্জন চাওড় হয়। সে বছর রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। ওই সময়ের প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পেরেজ সভাপতি হলে রিয়ালে দেখা যাবে লুইস ফিগোকে। যদিও বার্সেলোনার খেলোয়াড় ও ভক্তরা এই গুঞ্জনে কান দেননি। এমন খবর বিন্দু পরিমাণেও বিশ্বাস হয়নি তাদের।
যদিও বার্সেলোনা ও তাদের ভক্তদের বিশ্বাস টেকেনি। ঠিকই রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান পর্তুগালের সাবেক এই অ্যাটাকিং ফিডফিল্ডার। ৫ বছর ছেলের আদর পাওয়া ফিগো কাতালানদের কাছে হয়ে ওঠেন শত্রু। রিয়ালের বিপক্ষে বার্সেলোনা খেলতে নামলে গ্যালারিতে কেবল ফিগোর বিরুদ্ধেই স্লোগান উঠতো। ফিগোর বিরুদ্ধে লেখা প্লাকার্ড নিয়ে গ্যালারিতে হাজির হতেন দর্শকরা।
২০০২ সালের ২৩ নভেম্বর বার্সার ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে ম্যাচ খেলতে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। ওই ম্যাচটি কাতালানদের জন্য শুধু ফিগোর বিপক্ষেই ছিল। দর্শকরা প্ল্যাকার্ডে ডলার সাইন নিয়ে গ্যালারিতে হাজির হন। হুইস্কির বোতল ছুড়ে মারা হয় মাঠে। ম্যাচ অফিসিয়ালদের ঘুরে দাঁড়াতে হয় দর্শকদের দিকে মুখ করে। বৃষ্টিস্নাত সেই ম্যাচের ৯০ মিনিটজুড়ে কেবল ফিগোকেই দুয়ো দেন বার্সার ভক্তরা।
সেই মাচে বার্সার হয়ে খেলা ফান্সেস আরনাউ সম্প্রতি সিএনএনকে বলেছেন, 'ন্যু ক্যাম্পে একজনের বিরুদ্ধে এমন আওয়াজ আমি কোনোদিন শুনিনি। সেই ম্যাচে ভক্তরা ভেবেছে, তারা রিয়ালের বিপক্ষে নয়, লুইস ফিগোর বিপক্ষে খেলছে। এটা অবিশ্বাস্য এবং সেরা পরিবেশ ছিল রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার জন্য।'
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে নিজের প্রথম কর্নার শট নিতে যান ফিগো। এ সময় ওই পাশের দর্শকরা ফুঁসে ওঠেন। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যে কারণে পুলিশ সদস্যদের বেষ্টনীতে কর্নার শট নিতে হয় ফিগোকে। এ সময় বার্সা ডিফেন্ডার কার্লোস পুয়োল হাত উঁচিয়ে দর্শকদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু তাতেও কিছু হয়নি, মাঠের মধ্যে বিভিন্ন জিনিস ছুড়তে থাকে দর্শকরা।
পুলিশের বেষ্টনীর মাঝে থেকে কর্নার শট নেন ফিগো। আরেকটি কর্নারের বিনিময়ে ফিগোর শটটি ফেরান বার্সার গোলরক্ষক রবার্তো বানানো। এ সময় গ্যালারি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে, মাঠে আছড়ে পড়তে থাকে বোতলসহ বিভিন্ন জিনিস। অবস্থা বেসামাল হয়ে ওঠায় ১৬ মিনিটের জন্য খেলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন রেফারি।