এটিআর-৭২ উড়োজাহাজের বহর বিক্রি করবে নভোএয়ার, লক্ষ্য আন্তর্জাতিক রুটে সম্প্রসারণ
ঢাকা-ভিত্তিক দেশীয় এয়ারলাইন নভোএয়ার তাদের বহরের সবগুলো এটিআর-৭২ উড়োজাহাজ বিক্রি করে, আন্তর্জাতিক রুটগুলোর জন্য নতুন উড়োজাহাজ কিনবে।
এয়ারলাইনটি মূলত অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীসেবা প্রদান করে, তবে ভারতের কলকাতা রুটে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। গত জানুয়ারিতে নভোএয়ার তাদের দুটি এটিআর-৭২ উড়োজাহাজ নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্সের কাছে বিক্রি করে দেয়। অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়াকেই এসময় বিক্রির কারণ বলে উল্লেখ করেছিল।
বৃহস্পতিবার নভোএয়ারের একটি সূত্র টিবিএসকে জানায়, "পুরোনো বিমানগুলো বিক্রির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলের উপযোগী নতুন বিমান কেনায় বিনিয়োগ করা যাবে। তাই পাঁচটি এটিআর এয়ারক্রাফট বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।"
বিক্রয় কার্যক্রম চলার মধ্যে, বিদ্যমান এটিআর বিমানগুলো দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে নভোএয়ার।
নতুন বিমানগুলো আসার পরে আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় রুটেও ফ্লাইট কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
১৯৯৯ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে নভোএয়ারের কাছে থাকা পাঁচটি এটিআর৭২-৫০০ বিমান নির্মাণ করা হয়েছিল। এগুলোর বিক্রি সম্পন্ন হতে এক থেকে দুই বছর লাগতে পারে বলে ধারণা করছে নভোএয়ার।
নভোএয়ারের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "জানুয়ারিতে বিক্রি হওয়া দুটি বিমানের জন্য ২০২১ সালে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। বিক্রয় প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসময় লাগে বিধায় নতুন বিমান লিজ নেওয়ার আগেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এর আরেকটি কারণ হলো, বিমানগুলো যদি ব্যবহার নাও করা হয়, তারপরও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়।
বৈশ্বিক এভিয়েশন খাতের সংবাদ পরিবেশক সিএইচ-এভিয়েশন এক খবরে জানায়, বিক্রয়কাজে সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ারস্ট্রিম ইন্টারন্যাশনাল সঙ্গে কাজ করেছে নভোএয়ার। এই প্রতিষ্ঠানটি বিমান পুনঃবিপণন ও লিজের কাজে বিশেষায়িত।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এয়ারস্ট্রিম জানায়, "নভোএয়ারের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে পেরে আমরা আনন্দিত, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা তাদেরকে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের কাছে দুটি এটিআর৭২-৫০০ বিমান বিক্রয়ে সহযোগিতা করেছি।"
নভোএয়ারের সাথে কাজ করার ইতিহাস আছে এয়ারস্ট্রিমের, এর আগে এয়ার নিউজিল্যান্ড এবং বিকিউবি লাইনাস এরিয়াস থেকে তাদের এটিআর বিমান কেনায় সহায়তা করেছিল কোম্পানিটি।
এটিআর-৭২ ফ্রান্সের তৈরি একটি টার্বোপ্রপ যাত্রীবাহী বিমান, স্বল্পদূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনায় বিশ্বব্যাপী এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। বিমানটিতে সর্বোচ্চ ৭৮ জন যাত্রী বহন করা যায়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন রুটে যাত্রীবহনে এসব বিমান ব্যবহার করছে নভোএয়ার।
বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, যশোর, সিলেট, রাজশাহীসহ ভারতের কলকাতা রুটে যাত্রীসেবা দিচ্ছে দেশের এই এয়ারলাইন।
তবে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রীসেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থাকায়, নভোএয়ার এয়ারবাস থেকে তিনটি বিমান কিনতে চায়। ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুর– নতুন এই তিনটি রুটে এসব বিমান চলাচল করবে।
এর আগে জানুয়ারিতে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেছিলেন, "বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে বর্তমান রুটগুলোর জন্য সাতটি বিমানকে অতিরিক্ত বলে মনে হয়েছে। এজন্য আমরা অতিরিক্ত দুটি বিমান বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
আন্তর্জাতিক রুটে সম্প্রসারণে কোম্পানিটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে, এসময় তিনি নতুন বিমান কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান।
দেশের এয়ারলাইন শিল্প বেশকিছু কারণে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যতম একটি হলো- সড়ক ও রেল যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন। অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের ফ্লাইটে চলাচলকারীদের অনেকে এখন সড়কপথে বা ট্রেনে যাতায়াতে আকৃষ্ট হচ্ছেন। এতে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইটের চাহিদা কমে গেছে।
বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি হারও মানুষের ক্রয় ক্ষমতাকে সীমিত করেছে। মূল্যস্ফীতির হার চলতি বছরের মার্চের পর থেকে ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। বিমানের জ্বালানির দাম বেড়েছে। এভিয়েশন শিল্পের ওপর সরকার বিভিন্ন শুল্ক বাড়িয়েছে। ফলে অনেকটাই বেড়েছে টিকেটের দাম। এই অবস্থায়, অনেক যাত্রীই এখন আকাশপথে ভ্রমণ এড়িয়ে চলছেন বলে জানান শিল্পটির সংশ্লিষ্টরা।
তাছাড়া, ২০২২ সালের জুনে পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর থেকেই ঢাকা-যশোর এবং ঢাকা-বরিশাল রুটে ফ্লাইটের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।