জীবনের বাকি দিনগুলো স্বামীর কবরের পাশে কাটানো হলো না লালন অনুসারী বৃদ্ধা চায়নার
আধ্যাত্মিক সাধক লালন সাঁইজির অনুসারী মৃত গাজির উদ্দিন ফকিরের স্ত্রী চায়না বেগম চেয়েছিলেন, জীবনের বাকি দিনগুলো স্বামীর কবরের পাশে কাটিয়ে দেবেন। স্বামীর ভিটায় প্রতিদিন জ্বালাবেন সন্ধ্যা প্রদীপ। ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধার সেই ইচ্ছা পূরণ হলো না। কারণ তার ঘরটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার সকালে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামে সরেজমিনে মাঠের মধ্যে স্বামীর কবরের পাশে চায়না বেগমের ভাঙা ঘরটি দেখা যায়। টিনের চাল এবং বাঁশ-কাঠ চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ঘরটি ভাঙচুর করায় আশ্রয়হারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
স্বামীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চায়না বেগম বলেন, 'আমার স্বামী মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, কোথাও জায়গা না হলে তুমি আমার কবরের পাশেই থাকবা। প্রতি বছর বাতাসার সিন্নি হলেও করবা। তার কথা রাখতেই ঘরখানা তৈরি করি। কিন্তু এলাকার লোকজন আমাকে না জানিয়েই সব ভেঙে ফেলেছে।'
এ ঘটনার প্রতিবাদ করে হামলার শিকারও হয়েছেন বলেও জানান চায়না বেগম। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর থানায় ওই এলাকার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এনামুল হক, মাতব্বর মোশারফ হোসেন, আনার মণ্ডল ও সাইদুল হাজির নাম উল্লেখসহ ৪৫-৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বুধবার (২৬ জুন) সকাল ৬টার দিকে অভিযুক্তরা তার বাড়িঘর ভাঙচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করেছে।
চায়না বেগমের ভগ্নিপতি সাধু শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, 'আমাদের অপরাধটা কী? আমরা সাধু সমাজ কি নিজের জমিতেও আর থাকতে পারব না? আজকে সাধুর ঘর কেন ভাঙা হলো? সাধু সমাজকে কেন অপমান করা হলো?'
তিনি বলেন, 'মসজিদে মাইকিং করে লোক জড়ো করে ঘর ভাঙা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।'
ঘটনার তদন্তকারী উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুজ্জামান শুক্রবার বিকাল ৪টায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে চায়না বেগম ও সাধু শাহাবুদ্দিন সাবুসহ স্থানীয় কাউন্সিলর মাতব্বর ও অভিযুক্ত হামলাকারীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চায়না বেগমের ছেলের ভিটায় তার জন্য নতুন করে ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর এ ঘর তৈরির খরচ বহন করবে অভিযুক্তরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর এজাজ আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শুক্রবার বিকালে উভয়পক্ষকে নিয়ে আমরা কুষ্টিয়া মডেল থানায় বৈঠক করি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানার উপস্থিতিতে সবাই মিলে চায়না বেগমের ছেলে মজিবুর রহমানের ভিটায় অভিযুক্তদের অর্থায়নে চায়না বেগমের নতুন বসতভিটা নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ছেলের ভিটায় ঘর তুলে দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, আগে যেখানে চায়না বেগমের ঘর ছিল, সে জায়গাটি চনশূন্য এবং ওদিকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আনাগোনা রয়েছে। তাই নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ছেলের ভিটায় চায়না বেগমকে ঘর তুলে দেওয়া হবে।
তবে নতুন ঘর পেলেও আক্ষেপ রয়েই গেছে চায়না বেগমের। কারণ, স্বামীর কবরের পাশে থেকে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর যে ইচ্ছা তার ছিল, সেটি হয়ত আর পূরণ হচ্ছে না।