ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া সফরে মোদি
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে রাশিয়া গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার (৮ জুলাই) দুই দিনের সফরে তিনি মস্কোয় পৌঁছেছেন।
ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর জেরে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক জটিল হয়েছে, অন্যদিকে ভারত ও ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
সফরের প্রথম দিন সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন মোদি। দ্বিতীয় মঙ্গলবার দুই নেতা ক্রেমলিনে বৈঠক করবেন।
মস্কো সফর নিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে মোদি বলেছেন, 'আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক পর্যালোচনা করতে চাই। পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখতে চাই।'
মোদি সর্বশেষ রাশিয়া সফর করেছিলেন ২০১৯ সালে। ওই সময় তিনি ভ্লাদিভস্তকের পূর্বাঞ্চল সফর ও পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে এর মধ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে মস্কো ও বেইজিংয়ের প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা গ্রুপিং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন দুই নেতা।
ভারতের ছাড়মূল্যে তেল ও অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্যে অন্যতম মস্কো। বিশেষ করে ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর ভারতে ছাড়মূল্যে তেল ও অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে মস্কো। এখন ভারতের তেল আমদানির ৪০ শতাংশের বেশি হয় রাশিয়া থেকে।
তবে পশ্চিমা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্নতা ও বেইজিংয়ের সঙ্গে ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হতে থাকা সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে মস্কোর দীর্ঘদিনের অংশীদারত্বে প্রভাব ফেলেছে।
চীনকে ঠেকানোর জন্য পশ্চিমা শক্তিগুলোও গত কয়েক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। একইসঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে নয়াদিল্লিকে চাপও দিচ্ছে।
২০১৯ সালে মোদির রাশিয়া সফরের দুই বছর পর, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর কয়েক সপ্তাহ আগে নয়াদিল্লি সফর করেন পুতিন। তবে রাশিয়া চীনের আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ায় মস্কো ও নয়াদিল্লির সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মোদি ইতিমধ্যে গত সপ্তাহে কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত এসসিওর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেননি।
তবে এসবের মধ্যেই মোদির সফরে অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মোদি বরাবরই নিরপেক্ষ থেকেছেন।
এসবের পাশাপাশি ভারতের ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, টেলিকম সরঞ্জাম, লোহা ও ইস্পাত, সামুদ্রিক পণ্য ও যন্ত্রপাতির শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য রাশিয়া। বিপরীতে রাশিয়া থেকে ভারত সবচেয়ে বেশি আমদানি করে অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য, কয়লা, মুক্তা, মূল্যবান ও আধা-মূল্যবান পাথর, সার, উদ্ভিজ্জ তেল, সোনা ও রুপা।
রাশিয়া থেকে মোদি অস্ট্রিয়া সফরে যাবেন। ১৯৮৩ সালে ইন্দিয়ার গান্ধীর পর এই প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রিয়া সফর করছেন।