ম্যানেজার বিহীন অফিসের ধারণা থেকে সরে এল গুগল
প্রথিতযশা কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কোনো প্রকল্পে ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপকের প্রয়োজনীয়তা নেই বলছে, এমনটা সচরাচর শোনা যায় না। কিন্তু গুগল তাদের 'প্রজেক্ট অক্সিজেন' এর মাধ্যমে এই বিষয়টিই প্রমাণ করার কাজ হাতে নিয়েছিল ২০০২ সালে!
এই প্রকল্পের পূর্বানুমান ছিল, কোনো প্রকল্পে ম্যানেজারের কোন প্রভাব নেই কাজের ক্ষেত্রে এবং ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক পদটি আমলাতন্ত্রের অকেজো ধারণা।
২০০২ সালে প্রজেক্ট অক্সিজেনের প্রাথমিক অনুসন্ধান ছিল, ম্যানেজার ছাড়াই একটি কোম্পানি সুষ্ঠুভাবে কাজ করে যেতে পারে- তা প্রমাণ করা।
তবে এই পরীক্ষণটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়৷ পরে দেখা যায়,কর্মচারীরা তাদের কাজে মৌলিক চাহিদা ও জিজ্ঞাসার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিচালনা ও দিক নির্দেশনা পাচ্ছে না। অতঃপর ম্যানেজার পদটির গুরুত্ব স্বীকার করে নেয় গুগল।
তারপরই গুগল এর সম্পূর্ণ বিপরীত দিক, একজন ম্যানেজারের অন্যতম প্রধান গুণাবলি কী কী হতে পারে এটি নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। তারা প্রাথমিকভাবে ৮টি বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করে, পরবর্তীতে আরও দুটি যোগ করে এই তালিকায়।
গুগলের মতে একজন ম্যানেজারের মধ্যে যে যে গুণাবলী থাকা দরকার:
১. ভালো প্রশিক্ষক হওয়া
আপনি আপনার কর্মচারীদের ব্যাপারে হয় যত্নশীল আর নয়তো যত্নশীল নন, এর মাঝামাঝি কিছু নেই। যত্নশীল হলে অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সময় ও শক্তি বিনিয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমেই ভালো প্রশিক্ষকের অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। বাকি অর্ধেক হলো এটি মাথায় রাখা যে আপনি সংশোধনকারী নন বরং সাহায্যকারী। কাজের ক্ষেত্রে সরাসরি উত্তর দিয়ে দেয়ার চেয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে তাদের দেখার পরিধিও বৃদ্ধি পাবে।
২. নিজে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ না করে দলীয় ক্ষমতায়ন প্রদান
কোনো মানুষ-ই তাদের কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত হওয়া পছন্দ করেন না। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের বিশেষজ্ঞ গ্রেচেন স্প্রিৎজারের গবেষণা থেকে দেখা যায়, নিজের কাজের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ থাকা চাকুরিজীবীরা কাজ নিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি সন্তুষ্ট। যা তাদের সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে কর্মক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। এছাড়াও এধরণের কর্মতারা তাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের তুলনামূলক বেশি অনুপ্রেরণা যোগায়।
৩. দলীয় কাজের পরিবেশের উন্নতি এবং কর্মচারীদের সাফল্যের ব্যাপারে কাজ করা
ব্যাক্তির উন্নতিই অনেক সময় দলের সাফল্য এনে দিতে পারে। দলীয় সাফল্য পাওয়া কর্মচারীরা তাদের কাজের ব্যাপারে খুশি থাকে।
কর্মচারীদের পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে সাফল্য আনতে সক্ষম এমন পরিচালকদের কর্মচারীরা বেশি পছন্দ করে থাকে।
৪. কাজের ফলাফলের প্রতি মনোযোগী হওয়া
কর্মচারীদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অনুপ্রেরণা যোগানো এবং সহজেই কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
৫. যোগাযোগে দক্ষ হওয়া
যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা হলো, প্রচেষ্টা ছাড়াই ধরে নেওয়া যোগাযোগ সঠিকভাবে হচ্ছে। ফলপ্রসূ যোগাযোগের জন্য উভয়পক্ষের প্রচেষ্টায় যোগাযোগের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। এরজন্য প্রয়োজন মনোযোগ দিয়ে অপরপক্ষের কথা শোনা।
প্রোক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বলের সাবেক প্রধান কার্য নির্বাহী এ.জি. ল্যাফলে বলেন তার কাজের ৯০ শতাংশই ছিলো কার্যকরী যোগাযোগ।
৬. দলের জন্য লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ
নির্ধারিত কর্মপন্থা ও কৌশল ছাড়া কর্মচারীদের কাজ কখনোই ফলপ্রসূ হবেনা।
৭. পেশাভিত্তিক উন্নতির প্রতি যত্নশীল হওয়া ও উন্নতি নিয়ে আলোচনা
একজন দক্ষ ম্যানেজার তার নিজের ও কর্মচারীদের ক্যারিয়ার ও উন্নতির প্রতি সমানভাবে যত্নশীল। প্রত্যেকে তাদের কাজের উন্নতির ব্যাপারে জানতে চায়, এবং একজন ম্যানেজারের দায়িত্ব তাদেরকে এই ফিডব্যাক দেওয়া। সবাই ব্যক্তিগত উন্নতি সাধনের জন্যই কাজ করে।
৮. দলকে নির্দেশনা দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিশ্চিত করা
ম্যানেজার নিয়োগের ক্ষেত্রে গুগল কোডিং এর মতো প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকা ব্যক্তি নির্বাচন করে, যাতে তারা কর্মচারীদের সাথে অভিজ্ঞতা জানিয়ে সাহায্য করতে পারে। একজন ম্যানেজারকে নিজস্ব কর্মক্ষেত্রের সাম্প্রতিক তথ্যের ব্যাপারে সবসময়ই জানতে হয়।
৯. একত্রে কাজ করা
সাম্প্রতিক বিশ্বে যে কোনো ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করার গুণাবলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দলের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হয় একাজে। ম্যানেজারের যদি একত্রে কাজ করার মানসিকতা না থাকে, তবে তা বিভেদের সৃষ্টি করে সামগ্রিক ফলাফলের অধঃপতন ঘটায়।
১০. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ়চেতা হওয়া
ম্যানেজার যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাওয়ারে দ্বিধাদ্বন্দে ভোগেন, তবে তা সংগঠনের কাজের ক্ষেত্রে সন্দেহ, অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। আত্মবিশ্বাসী হয়ে নেওয়া দৃঢ় কোনো সিদ্ধান্ত ভুল হলেও, তা দ্বিধান্বিত হয়ে নেয়া সিদ্ধান্তের চেয়ে ফলপ্রসূ।