লড়ার আগেই হেরে গেল বাংলাদেশ
টেস্ট সিরিজের হতাশা ভুলে নতুন উদ্যোমে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আশায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সংক্ষিপ্তম এই ফরম্যাটেও ভাগ্য বদলালো না সফরকারীদের। ফরম্যাটের সঙ্গে খেলোয়াড়ও বদলালো, শুধু বদলালো না বাংলাদেশের ব্যাটিং। সংক্ষিপ্তম ফরম্যাটেও হতাশা জাগিয়ে অল্প রানেই অলআউট হলো বাংলাদেশ, যা হেসেখেলেই পাড়ি দিলো ভারত।
লড়াই করার আগেই পরাজিত দল হিসেবে নাম লেখা হয়ে গেল বাংলাদেশর। সোমবার গোয়ালিয়রে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলা ১৫ টি-টোয়েন্টির ১৪টিতেই হারলো তারা। ভারতের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের জয় একটিতে, ২০১৯ সালে দিল্লিতে। আগামী ৯ অক্টোবর দিল্লিতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ঘরের মাঠের দলটির মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান ব্যর্থ হন। প্রায় ১৫ মাস পরে টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়া কেবল অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত কিছুটা লড়াই করেন। দারুণ উইকেটে এ দুজনও অবশ্য টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করতে পারেননি। ১৯.৫ ওভারে ১২৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। পরে বল হাতেও কিছুই করতে পারেনি তারা। সঞ্জু স্যামসন, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়াদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ১১.৫ ওভারেই জয় তুলে নেয় ভারত, ৪৯ বল হাতে রেখেই জেতে স্বাগতিকরা। বল হাতে রেখে জেতার দিক থেকে এটা তাদের চতুর্থ বড় জয়।
লক্ষ্য তাড়ায় খুনে শুরু করেন ভারতের দুই ওপেনার স্যামসন ও অভিষেক শর্মা। শরিফুল ইসলামের করা প্রথম ওভার থেকেই ১০ রান তোলেন তারা, এরপর তাসকিন আহমেদের ওভার থেকে নেন ১৫ রান। দুই ওভারেই ভারতের স্কোরকার্ডে যোগ হয় ২৫ রান। এরপরও অবশ্য হতাশ হতে হয় তাদের। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে রান আউটে কাটা পড়েন ৭ বলে ২টি চারে ও একটি ছক্কায় ১৬ রান করা অভিষেক।
তিন নম্বরে নেমেই ঝড় তোলেন অধিনায়ক সূর্যকুমার। ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়ার আগে ১৪ বলে ২টি চার ও ৩টি চক্কায় ২৯ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। পাওয়ার প্লে ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৭১ রান তোলে ভারত। ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা স্যামসন দলীয় ৮০ রানে আউট হন। এর আগে ১৯ বলে ৬টি চারে ২৯ রান করেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান।
২৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫২ রানের জুটি গড়া হার্দিক ও নিতিশ কুমার রেড্ডির ব্যাটে বাকি পথ পাড়ি দেয় ভারত। তাণ্ডব চালানো হার্দিক ১৬ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় হার না মানা ৩৯ রান করেন। অভিষিক্ত নিতিশ ১৫ বলে একটি ছক্কায় ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ও মিরাজ একটি করে উইকেট নেন। তাসকিনের ওপর দিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝড় গেছে, ২.৫ ওভারে ডানহাতি এই পেসারের খরচা ৪৪ রান। মুস্তাফিজ রান দেন ১২ ইকোনমিতে।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ প্রথম ওভারেই উইকেট হারায়। ভারতের পেসার আর্শদীপ সিংয়ের বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ২ বলে ৪ রান করা লিটন কুমার দাস। ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি প্রায় দুই বছর পর দলে ফেরা পারভেজ হোসেন ইমন। তৃতীয় ওভারে আর্শদীপের বলেই আউট হন ৯ বলে ৮ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার।
তৃতীয় উইকেটে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনে নামা অধিনায়ক শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। এ দুজন ২৬ রানের জুটি গড়েন। রান বাড়াতে গিয়ে শট খেলার চেষ্টা করা হৃদয় লং অনে ধরা পড়েন ১৮ বলে ২টি চারে ১২ রান করা হৃদয়। ৪০ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এমন দুঃসময়ে উইকেটে গিয়েই ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দ্বিতীয় বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দেন ২ বলে ১ রান করা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
জাকের আলী অনিক বড় ছক্কায় আশা জাগান, কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ভারতের লেগ স্পিনার বরুন চক্রবর্তীর বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন ৬ বলে একটি ছক্কায় ৮ রান করা জাকের। এর মাঝেও টিকে থাকনে শান্ত। পরের উইকেটে মিরাজের সঙ্গে ১৮ রানের জুটি গড়েন তিনি। ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ২৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৭ রান করেন শান্ত।
৭৫ রানে ছয় উইকেট হারানো দলে আশা ফেরান মিরাজ ও রিশাদ। দুজনই টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন। সপ্তম উইকেটে ১১ বলে ১৮ রান যোগ করেন তারা। বড় শট খেলতে গিয়ে আকাশে বল তোলা রিশাদ ৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১১ রান করেন। বাকি পথ বোলারদের নিয়ে লড়েন মিরাজ। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ৩২ বলে ৩টি চারে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন। তাসকিন আহমেদ ১৩ বলে ১২ রান করেন। ম্যাচসেরা আর্শদীপ ও বরুন ৩টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান হার্দিক, অভিষিক্ত মায়াঙ্ক ও ওয়াশিংটন।