ওয়ারেন বাফেটের মতে, যে চারটি জিনিস স্বপ্নচারী মানুষ আর সফল মানুষকে পৃথক করে চেনায়
বিশ্বের সবচেয়ে সফল পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী বলেই পরিচিত ওয়ারেন বাফেট। কখনও কি তার কোনো সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জেনে বা তার কোনো শুনে; মাথা চুলকে বলেছেন- কেন এটা আমার মাথায় এলো না?
যারা তার সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, তাদের সকলেরই এ অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা। বিনিয়োগ জগতের বাইরেও কিংবদন্তীতূল্য সুখ্যাতি রয়েছে তার অতি-বাস্তবসম্মত জ্ঞান নিয়ে। নিজেদের জীবনে এমন বিবেচক সিদ্ধান্ত নিলে- আমরা আজ যেখানে আছি তার চাইতেও অনেক এগিয়ে থাকতাম, এব্যাপারে একমত হবেন বাফেটের সিংহভাগ অনুরাগী।
যেমন ধরুন, বাফেট সবসময় সাধারণ জ্ঞানকে গুরুত্ব দেন। বিষয়টি রকেট সায়েন্স না হলেও, আমাদের অনেকেই তা প্রতিনিয়ত মেনে চলার অভ্যাস করিনি। আর এ অভ্যাস গড়েও উঠবে না, যদি আমরা অনুশাসনের প্রভাব সত্যিই কাজ করে- এমন নীতিতে বিশ্বাস না করি।
বাফেটের অনুশাসন খুবই সোজাসাপটা। মানতে হলে শুধু ইতিবাচক মনোভাব ও দৃঢ়তা নিয়ে নিচে আলোচিত সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
১.বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন:
আমাদের সাধারণ জ্ঞান প্রসঙ্গে বাফেট যতো পরামর্শ দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম একটি সম্প্রতি উঠে আসে বন্ধু বিল গেটসের কাছ থেকে পাওয়া বাফেটের ৯০তম জন্মদিনের বার্তায়।
শুভেচ্ছা বার্তায় গেটস বলেছেন, ''ওয়ারেনের কাছ থেকে আমি অনেক বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছি। কিন্তু, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো; ওর কাছ থেকে বন্ধুত্ব কেমন হওয়া উচিৎ- তা জানতে পারাটা। বহু বছর আগে কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ওয়ারেন বলেছিল, তোমরা যাদের সঙ্গে মেলামেশা করবে, জীবনে তাদের পথই অনুসরণ করবে। তাই সবসময় নিজের চাইতে ভালো লোকেদের সঙ্গে চলাফেরা করার অভ্যাস গড়। যেমন বন্ধু বেঁছে নেবে,তাদেরই প্রতিফলন দেখা যাবে তোমার মধ্যে। তাই, এমন কিছু ঘনিষ্ঠ এবং উত্তম স্বভাবের বন্ধু বানাও, যাদের সারাজীবন কাছে রাখতে পারবে। কিন্তু, তাদের সাথে মনের মিলের পাশাপাশি, তাদের জীবনযাপন থেকেও যেন অনুপ্রাণিত হও, সেই লক্ষ্য রেখো।''
২. প্রতিদিন একটু বুদ্ধিমান হয়ে ঘুমোতে যাওয়া উচিৎ:
দীর্ঘজীবনে বাফেট এতকিছু অর্জন করেছেন যে, পরামর্শ নিতে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিই তার দ্বারস্থ হন। অবশ্য, বাফেট মনে করেন- সকলেই চাইলে তার মতো হতে পারবে। যদিও, এজন্য অনুসরণ করা দরকার তার বাফেটিয় তত্ত্ব।
তা অবশ্য জটিল কিছু নয়, বরং জ্ঞান আহরণের নিয়ত চেষ্টা। নিজের দিনটা কাটানো নতুন একটা কিছু শিখে বা জেনে। এরফলে যা হবে, প্রতিদিন আপনি আগের চাইতে একটি বেশি বুদ্ধিমান হয়ে ঘুমোতে যাবেন।
বিষয়টির সঙ্গে বিনিয়োগ ব্যবসার অনেক মিল রয়েছে বলে জানান বাফেট। তিনি বলেন, ''বিনিয়োগ ব্যবসায়ে যেমন ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ঝুড়ি ঋদ্ধ হয়, ব্যক্তিগত জীবনও তার বিপরীত নয়। সঞ্চিত জ্ঞানও ভালো বিনিয়োগের মতো, সুদসমতে যা একদিন আপনার কাছেই ফিরে আসবে।''
জ্ঞানার্জনের জন্য বাফেট যে কাজটি করার জন্য প্রসিদ্ধ তা হচ্ছে; বই পড়া। এখনও তিনি কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝে অনেকটা সময় বই পড়ে কাটান। এমনকি দিনের ৮০ শতাংশ সময়টাই তিনি বই পড়ে কাটান।
এত সময় বই পড়ে কাটানো আপনার পক্ষে সম্ভব কিনা- তা এখানে প্রাসঙ্গিক আলোচনা নয় । মূল শিক্ষণীয় হচ্ছে; বাফেটিয় তত্ত্বটি আপনাকে প্রতিদিন একটু অগ্রসর হতে শেখাবে এবং জ্ঞান আপনার দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াবে।
৩.যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত করুন:
বাফেটের মতে, মানুষের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে নিজেকে গড়ে তোলা। ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে নিজেকে উন্নত করার মধ্য দিয়েই যা অর্জন করা সম্ভব। এই যে, নিজেকে গড়ে তোলা; এটা পারিবারিক জীবন হোক বা ব্যবসা সবখানেই আপনার পাশে থাকবে।
তরুণ বয়স থেকেই অন্যের সঙ্গে ভালোভাবে বোঝাপড়া ও যোগাযোগের গুণটি রপ্ত করেছিলেন বাফেট। তার মতে; এটি আমাদের আত্মমর্যাদা দৃঢ় করে, অন্যের কাছে নিজের মূল্যায়ন বাড়ায়।
''বর্তমানের চাইতে নিজের যোগাযোগ দক্ষতা কমপক্ষে ৫০% বাড়বে, নিয়মিত নিজের লিখিত এবং মৌখিক উপায়ে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর অনুশীলন করলে'' তিনি যোগ করেন।
৪.'না' বলা শিখুন:
জীবনের শুরুতেই একটি বড় গুণ রপ্ত করেছিলেন বাফেট। খুব সাধারণভাবে, নিজের চারপাশে একটি কৌশল ও অনুশীলনের অভেদ্য দেওয়াল গড়ে তোলেন তিনি। এজন্যেই বাফেটের এই উক্তিটি আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে;
''সফল দাবি করা ব্যক্তি এবং প্রকৃত সফল ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যে; প্রকৃতপক্ষে সফল লোকেরা প্রায় সবকিছুতেই না বলে।''
আমরা ব্যবসায়ী হই বা পদস্থ কর্মকর্তা; জীবনকে জটিলতা মুক্ত রাখতে আমাদের অল্পকিছু জিনিস গ্রহণ করতে হবে। বাকি সব বিষয় থেকে দূরে সরে থাকাটাই হবে বিবেচনার কাজ।
এজন্যেই 'না' বলতে হবে অদরকারি জিনিসকে, বিলাসিতা বা অলসতাকে। প্রাত্যহিক জীবনে অসংখ্য প্রসঙ্গ এড়িয়ে নিজের মূল লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে, যার বিকল্প নেই।
'হ্যাঁ' বলতে শিখুন শুধু যা আপনার বা অন্যের জন্য কল্যাণকর, এমন বিষয়কে।
- সূত্র: ইঙ্ক ডটকম