লড়াকু মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৪৪
উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ ছাড়ানো সংগ্রহ, শুরুটা মন্দ ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু হঠাৎ-ই ছন্দপতন, আফগান আক্রমণে ১৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দিশাহারা অবস্থা। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলের হাল ধরলেন নাজমুল হোসেন শান্তর অবর্তমানে নেতৃত্ব পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ দুজন ধীর-স্থির গতিতে শুরু করলেন, থিতু হয়ে গড়ে তুললেন দারুণ এক জুটি। শেষ পর্যন্ত এই জুটিই হলো বাংলাদেশের লড়াইয়ের পাথেয়।
সোমবার দুবাইয়ের শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে ২৪৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। অবস্থা বিবেচনায় এই সংগ্রহেই সন্তুষ্ট থাকার কথা তাদের। হঠাৎ-ই খেই হারানো বাংলাদেশ ৭২ রানেই হারায় ৪ উইকেট। ধংসস্তূপে দাঁড়িয়ে জুটি গড়া মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহই দলের পক্ষে যা রান করেন। ১৮৮ বলে ১৪৫ রানের জুটি গড়েন তারা। যা পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ, বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দারুণ এই জুটি গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ।
যদিও বাংলাদেশের ইনিংসের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুই পায় তারা। উদ্বোধনী জুটিতে ৮.৩ ওভারে ৫৩ রান যোগ করেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। কিন্তু এই জুটি ভাঙতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। চোখের পলকে পাল্টে যায় তাদের স্কোরকার্ডের চেহারা। ৫৩ থেকে ৭২ রানের মধ্যে একে একে ফিরে যান সৌম্য, তানজিদ, জাকির হাসান ও তাওহিদ হৃদয়।
সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা সৌম্য ২৩ বলে ৩টি চারে ২৪ রান করেন। ২৯ বলে ৩টি চারে ১৯ রান করেন তানজিদ। এক বছরেরও বেশি সময় পর একাদশে সুযোগ পাওয়া জাকির রান আউটে কাটা পড়ার আগে ৭ বলে ৪ রান করেন। ক্যারিয়ারের শুরুর ভাগে দারুণ ধারাবাহিক ব্যাটিং করা হৃদয় গত কয়েক ম্যাচ ধরে নিজের ছায়া হয়ে আছেন। আজও রানের দেখা পাননি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, ১৪ বলে ৭ রান করে ফেরেন তিনি।
শুরুর চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। নেতৃত্বের অভিষেকে দলের বেহাল দশা, এমন সময়ে মিরাজ হয়ে উঠেন সত্যিকারের নেতা। অতি সাবধানী হয়ে আগে চাপ কাটানোর চেষ্টা চালান তিনি, সঙ্গে ভালোভাবেই পান মাহমুদউল্লাহকে। থিতু হওয়ার পর রান তোলায় মন লাগিয়ে সফল হন এ দুজন।
দলে স্বস্তি ফিরিয়ে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১১৯ বলে ৬৬ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন মিরাজ। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এই তালিকায় সবার উপরে শান্ত, অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ওয়ানডে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আমিনুল ইসলাম বুলবুল নেতৃত্বের অভিষেকে খেলেন ৭০ রানের ইনিংস।
মিরাজ ফেরার পর একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন দুর্বার ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ, শেষ বল পর্যন্ত লড়েন তিনি। ছিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরির পথেই, কিন্তু শেষ বলে দুই রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে যান ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ। এর আগে ৯৮ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯৮ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন তিনি। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি বেগ দিয়েছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। আফগান এই পেসার ৭ ওভারে ৩৭ রানে নেন ৪টি উইকেট, যা তার ক্যারিয়ার সেরা। মোহাম্মদ নবী ও রশিদ খান একটি করে উইকেট পান।