ছবির গল্প: দুনিয়া পাল্টে দেওয়া পোস্টার
আমাদের জীবনে পোস্টার ডিজাইনের প্রভাব দীর্ঘদিনের। দাসপ্রথাবিরোধী বার্তা ও যৌন স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নির্বাচন ও চলচ্চিত্রের প্রচারণা- সবকিছুতেই জড়িয়ে রয়েছে পোস্টারের দাপুটে প্রভাব।
এ মাসেই প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক ও গবেষক কলিন সল্টার প্রকাশ করেছেন '১০০ পোস্টারস দ্যাট চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড' শিরোনামে এক বই। ৩০০ বছরের ধ্রুপদী পোস্টার ডিজাইনের নানা গল্প উঠে এসেছে সেখানে।
সেই বই থেকে নির্বাচিত কয়েকটি গল্প নিয়ে এ আয়োজন।
ক্রীতদাসবাহী জাহাজ
আফ্রিকানদের ক্রীতদাস হিসেবে জাহাজ বোঝাই করে উত্তর আমেরিকায় নিয়ে আসার সেই নির্মম বাস্তবতাকে ধাক্কা দেওয়া এই পোস্টারের দেখা মেলে ১৭৮৮ সালে। ক্রিতদাসবাহী ব্রিটিশ জাহাজের ছবি আঁকা পোস্টারটি ডিজাইন করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের 'সোসাইটি ফর ইফেক্টিং দ্য অ্যাবোলিশন অব দ্য স্লেভ ট্রেড'-এর উদ্যোগে। এই পোস্টার সেই কুখ্যাত দাস-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে।
বিজ্ঞাপনে চিত্রকর্ম
আধুনিক অ্যাডভার্টাইজিং টেকনিকের বিকাশ ঘটে ১৮৯০-এর দশকের শেষভাগে। এ সময় পণ্য বিক্রিতে শিল্পের ব্যবহার ঘটানো হয়। ১৮৯৯ সালে ফরাসি ম্যাগাজিন 'লা ফ্রু'র জন্য এই পোস্টারের ডিজাইন করেন ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী লিওনেত্তো কাপ্পিয়েল্লো। এ ধরনের পোস্টার তখন হরদম দেখা যেত।
কারাগারে নারী নির্যাতন
যুক্তরাজ্যের 'দ্য উইমেনস সাফ্রেজ মুভমেন্ট' রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টার শিল্পের ব্যবহার করে। এটি তেমনই একটি উদাহরণমূলক পোস্টার। ১৯০৭ সালের এই পোস্টারে দেখা মেলে, ভোটাধিকার চাওয়ায় যে নারীদের কারাবন্দি করা হয়েছে, তাদের কী রকম জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে খাবার।
'আমরাই পারব!'
এই পোস্টারের ট্যাগলাইন- 'আমরা পারব!' দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধের সরঞ্জাম তৈরিতে কাজ করার জন্য আমেরিকান নারীদের উৎসাহ দিতে ব্যবহার করা হয় এই 'রোজি দ্য রিভেটার' পোস্টার। ১৯৪৩ সালের এই পোস্টার ডিজাইন করেন জে হাওয়ার্ড মিলার। প্রকাশের পর থেকে এখনো এটি নারী শক্তির এক দাপুটে প্রতীক হয়ে রয়েছে।
নিরাপদ সড়ক
যুদ্ধোত্তর কালে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে চোখে পড়ার মতো। এ সময়ে গাড়ি বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। আর গাড়িতে ঘুরতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হওয়ার ঘটনাও বাড়তে থাকে সমান তালে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ১৯৫০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ান রোড সেফটি কাউন্সিল এক প্রচারণার প্রচলন ঘটায়। সেখানে নিজ সন্তানদের 'জীবিত বাড়ি ফিরিয়ে আনা'র ব্যাপারে আর্জি জানানো হয় অভিভাবকদের প্রতি।
চের প্রেরণা
লাতিন আমেরিকান বিপ্লবী চে গেভারার আনুষ্ঠানিকভাবে 'নায়কোচিত গেরিলা যোদ্ধা'খ্যাত ('হিরোয়িক' গেরিলা ফাইটার') ১৯৬৭ সালের এই পোস্টার রাতারাতি পৃথিবীর নানা দেশের শোবার ঘরের দেয়ালে জায়গা পেতে থাকে। অনেক বিক্ষোভ-আন্দোলনে ব্যবহারের পাশাপাশি পোস্টার বিক্রির দোকানগুলোতেও দেদার বিকোতে থাকে এটি।
পুরুষের দায়
যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়ের ভূমিকা নিয়ে দু'বার ভাবতে এবং গর্ভনিরোধের দায়ভার নিতে পুরুষদের উৎসাহিত করার জন্য ১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যের হেলথ এডুকেশন কাউন্সিলের পক্ষে পোস্টারটির ডিজাইন করেন ক্রেমার শাচি। এই পোস্টার ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।
যুদ্ধ ও পতাকা
ভিয়েতনাম যুদ্ধে ক্ষুব্ধ এক অজ্ঞাতপরিচয় আমেরিকান শিল্পী ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে পোস্টারটির ডিজাইন করেন। এই পোস্টারে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাকে উল্টে দিয়ে তারকা ও ডোরাকাটা দাগগুলোর অর্থ বদলে দেওয়া হয়। আর ডোরাকাটা দাগগুলোকে রাইফেল এবং তারকাগুলোকে বিমানে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে যুদ্ধকালে ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ-লাখ বোমা বর্ষণের প্রতীকে পরিণত করা হয় পোস্টারটিকে।
চলচ্চিত্র প্রচারণায় নতুন ঢেউ
১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া স্টিভেন স্পিলবার্গের 'জস' সিনেমার এই পোস্টার রাতারাতি এক আইকনে পরিণত হয়। এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী চলচ্চিত্র-পোস্টারগুলোর অন্যতম হিসেবে করা হয় গণ্য। এর বিভিন্ন অনুলিপি এখনো হচ্ছে।
এইডসকে নয় হেলা
১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগে এইচআইভি/এইডস বৈশ্বিক মহামারি ছিল তুঙ্গে। সে সময়ে অসুখটির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রচারণার উদ্যোগ নেয় ব্রিটিশ সরকার। তার মধ্যে এই পোস্টারও ছিল। তাতে লেখা ছিল: 'এইডস: হেলা করে মরো না।'
আশার বার্তা
২০০৮ সালে শেপার্ড ফেয়ারির ডিজাইন করা এই গ্রাফিক পোস্টার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বারাক ওবামার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণামূলক পোস্টারটিতে 'পরিবর্তন' শব্দের পরিবর্তনে 'আশাবাদে'র বার্তা দেওয়া হয়।
- দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ: রুদ্র আরিফ