প্রক্টরদের উপস্থিতেই ঢাবিতে আন্দোলকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
ডাকসু নির্বাচনের আগে ভর্তিপরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ছাত্রলীগের ৩৪ নেতাকর্মীকে। প্রতিবাদে অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াতের কার্যালয় ঘেরাও করেন ‘দুর্নীতি ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী। কোটা আন্দোলনকারী, বাম ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে দলটি। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরদের উপস্থিতিতেই শিক্ষার্থীদের এই দলটির কর্মসূচিতে হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সদস্য।
তবে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যে, ‘শিক্ষাবিরোধী’ কর্মসূচি চালানো কিছু ‘রাজনৈতিক কারবারির’ সঙ্গে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ সামান্য ‘উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়’ হয়েছে মাত্র।
ওদিকে, হামলায় অন্তত ৫ আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র জোটের জিএস প্রার্থী শাফি আবদুল্লাহ। হামলায় আহতদের মধ্যে আসিফ মাহমুদ, চয়ন বড়ুয়া, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, আতিক চৌধুরী এবং প্রগতি বর্মন তমা রয়েছেন বলে তিনি জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, পরীক্ষা ছাড়াই ছাত্রলীগের নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার বিরোধিতা করে আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির অংশ হিসবে বুধবার দুপুরে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের পদত্যাগ দাবি করে তার কার্যালয় ঘেরাও করেন তারা।
একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সূর্যসেন হল, মুহসীন হল, জসিমউদ্দীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে সেখানে উপস্থিত হন। সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ চালুসহ চার দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচির কথা বলেন তারা।
ব্যানারের পেছনে যারা ছিলেন তাদের প্রায় সবাই ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এরপর ডিনের কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের এই দুটি দল মুখোমুখি অবস্থানে গেলে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তারা। এ সময় সহকারী প্রক্টর সীমা ইসলাম ও মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়াসহ প্রক্টরিয়াল টিমের অন্তত ছ’জন সদস্য সেখানে ছিলেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা দু’পক্ষকেই সংযত থাকতে বলেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
মারামারির ঘটনার পর আহতদের নিয়ে প্রক্টর অফিসে যান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর। সেখানে প্রক্টর না থাকায় তাকে ফোন দিয়ে কথা বলেন নূর। পরে তিনি ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিনের কার্যালয়ে যান।
ভিপি নূর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আমি ডিন স্যারকে বলেছি, তিনি কেন এবং কোন যুক্তিতে ছাত্রলীগের নেতাদের ভর্তি করিয়েছেন তা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে বলার জন্য। কিন্তু তিনি ছাত্রলীগের কর্মীদের ডাকিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করিয়েছেন। আমি তাকে ডিনের পদ এবং ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেছি।”
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিলে নিজেই ‘রাজপথে নামবেন’ জানিয়ে নূর বলেন, “ছাত্রলীগ যে হামলা চালিয়েছে তার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমারও পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া ছাত্রলীগের নেতাদের যদি বহিষ্কার না করা হয়, যদি তাদের ডাকসু থেকে অপসারণ না করা হয় এবং ডিন যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমিও রাজপথে নামব।”
হামলার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, “এ হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই। দু’দল শিক্ষার্থীর মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কোনো অনুসারী নেই।”
তিনি বলেন, “তথাকথিত রাজনৈতিক কারবারিরা ডিন কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো ষাট দশকের একটি কর্মসূচি ডেকেছিল। বর্তমান বাস্তবতায় এটি একটি শিক্ষাবিরোধী কর্মসূচি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সব নিয়ম বহাল রাখার দাবিতে ডিনকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। আন্দোলনকারীরা আক্রমণাত্মক অবস্থায় ছিল। তাই সেখানে ওদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে।”