ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, দায়িত্বগ্রহণের দুদিন না যেতেই পরীক্ষার মুখে দ. কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু এয়ারের একটি উড়োজাহাজ আজ রোববার সকালে ১৭৫ যাত্রী, ৬ ক্রুসহ মোট ১৮১ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে।
স্থানীয় ইয়োনহ্যাপ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আজ রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। ১৭৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট নিয়ে এটি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ফিরেছিল এবং অবতরণের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকিরা সবাই নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে এটিকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে। আজ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সাং-মক। তিনি যখন সেখানে আসেন তখন তাঁর দায়িত্বগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টাও পার হয়নি।
প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সো। কিন্তু, তিনিও পার্লামেন্টে অভিশংসিত হওয়ার পরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব বর্তায় অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মকের কাঁধে।
প্রসঙ্গত, দেশে কয়েক ঘণ্টার জন্য সেনাশাসন জারির পরে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েন তখনকার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইউল। এরপর গত ১৪ ডিসেম্বর তাকে অভিশংসন করে পার্লামেন্ট। তখন থেকেই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে দ. কোরিয়ার রাজনীতিতে। এরমধ্যে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনায় এশিয়ার চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির সরকার নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এজন্যই দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই সেখানে হাজির হন চোই, জায়গাটিকে 'বিশেষ দুর্গত অঞ্চল' হিসেবে ঘোষণা করেন। এসময় তিনি বলেন, 'নিহতদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছে সরকার। আমরা এই দুর্ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে, এবং এমনটা যেন আর না ঘটে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।'
জনসম্মুখে বেশ গোছানো একটি প্রতিক্রিয়া দেওয়া গেলেও— সরকারি দপ্তরগুলোর কার্যক্রমে কিন্তু শৃঙ্খলা এখনো আনা যায়নি। দ্রুত রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে নতুন করে 'চেইন অব কম্যান্ড' ঠিক করার কাজ চলছে। এরমধ্যে দুর্ঘটনা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে কীভাবে বিবৃতি দিয়ে তথ্য জানানো হবে— সেই কৌশল নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই জানান, দ. কোরিয়ার কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। এদের মধ্যে একজন একটি মন্ত্রণালয়েরও মুখপাত্র। তিনি বলেন, 'মুয়ানে আজকে চোই ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যাননি। আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিবহন ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি টিম মুয়ান বিমান দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তদন্তের অগ্রগতি সরাসরি চোইকে জানাবেন। তবে এই সময়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থা কীভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেবে— এখনও তা ঠিক হয়নি।'
পররাষ্ট্রনীতি, প্রশাসনিক সমস্যা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মন্ত্রণালয় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোইকে তথ্যপ্রদানের জন্য নিজস্ব টিম গঠন করেছে। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের কর্মকর্তারা এই প্রচেষ্টায় যুক্ত হননি। তারা চোইকে এড়িয়ে চলছেন। এই অবস্থায় রাজধানী সিউলের একটি সরকারি ভবন থেকে অফিস করছেন চোই। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হলেও থাকতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী হান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের দপ্তরের কেউই আদতে চোই এর সাথে কাজ করবেন কিনা– এখনও তা স্পষ্ট নয়। বর্তমানে চোই এর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু দায়িত্ব একজন উপমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে।