সবজির দাম কমলেও চালের দাম বেশি, খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা
আমনের ভরা মৌসুম সত্ত্বেও গত এক মাসে চালের দাম কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে বাজারে সবজির দাম কমে গেলেও চালের দাম বৃদ্ধির কারণে সাংসারিক খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা।
খুচরা ব্যবিসায়ীদের অভিযোগ, মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দর চড়া। তাদের দাবি, মিল পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। এদিকে, দাম কমাতে চাল আমদানিতে সরকার শুল্ক কমালেও তার প্রভাব এখনও বাজারে পড়তে শুরু করেনি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্যমতে, গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। সরু চালের (নাজির, মিনিকেট) দাম ৪ শতাংশ বেড়ে ৭০-৮৪ টাকা, মাঝারি চালের দাম (পাইজাম, আটাস) ২.৪৬ শতাংশ বেড়ে ৬০-৬৫ টাকা এবং মোটা চালের (স্বর্ণা, চায়না, ইরি) দাম ৬.৬৭ শতাংশ বেড়ে ৫৪-৫৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে গড়ে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর কল্যাণপুর, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজার, মগবাজার বাজার এলাকা ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহ তিনেক আগে যেই মানের মিটিকেট চাল ৭২ টাকা কেজিতে টাকা হয়েছে— এখন সেটি দাম বেড়ে ৮২ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আর মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫-৬ টাকা। বিআর-২৮ চাল এখন ৬৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে এবং ভালো মানের নাজির চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯২ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স সিরাজ অ্যান্ড সন্স এর চাল বিক্রেতা মোহম্মদ খোকন বলেন, "চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিল মালিক ও বড় কর্পোরেট গ্রুপকে মনিটরিং করতে হবে। আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিতে ১-২ টাকা লাভ করি।"
কল্যাণপুরের মাহিন স্টোরের বিক্রেতা মোহম্মদ মঞ্জুর ইসলাম বলেন, "প্রায় এক মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজির বস্তাতে মিনিকেট চালের দাম প্রায় ৪০০ টাকা বেড়েছে। ৩,৯০০ টাকা এখন বস্তা পাইকারি কিনতে হচ্ছে আমাদের।"
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর আমন মৌসুমে এক লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বন্যার কারণে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে ৮.০৩ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৪.১৬ লাখ মেট্রিক টন গম মজুদ রয়েছে। মজুদ বাড়াতে সরকার বর্তমানে আমন মৌসুমে উৎপাদিত ধান থেকে সেদ্ধ চাল ক্রয় করছে।
এদিকে, বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এ সমস্যা সাময়িক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, চালের মজুতে কোনো সমস্যা নেই। তারপরও খাদ্য মন্ত্রণালয় ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করছে। এছাড়া, নিম্ন-আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে ওএমএস ও টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, "আমদানি শুরু হলে যদি কেউ অনায্যভাবে মজুত করে থাকে, তাহলে তারা তা ছাড়তে বাধ্য হবে। বাজারে দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে।"
সবজির বাজারে স্বস্তি
চালের দাম চড়া হলেও শীতের সবজি ওঠায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু জিনিসের দাম কমেছে।
আলু এখন প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে— যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। বড় ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ২০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা, মূলা ২০-৩০ টাকা, বিভিন্ন জাতের শিম ৩০-৫০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সোনালী মুরগির দাম প্রতিকেজি ৩৪০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০-২১০ টাকা এবং গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি।
এদিকে, চালের দাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্রেতা শাহ আলম বলেন, "আমাদের আয় বাড়েনি, কিন্তু দাম বাড়ছে। ফলে মুরগি, মাছ, দুধের মতো আমিষজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আমরা সবজির ওপর বেশি নির্ভর করছি। নাহলে সংসারের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।"