মেধাবী জেন জি-দের কলেজ থেকেই ‘ভাগিয়ে’ নিচ্ছে জাপানের কোম্পানিগুলো, দিচ্ছে লোভনীয় সুবিধা
বহু জেন জি তরুণের জন্য শিক্ষাঋণ শোধ করা এবং ভালো বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা স্রেফ স্বপ্নই থেকে যায়। তবে জাপানের মেধাবী তরুণদের জন্য এই সমস্যা হয়তো এতটা জটিল নয়। কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। তারা উল্টো চাকরিদাতা বাছাই করছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান শুশোকু মিরাই কেনকিউশো-র ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের মার্চে যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক হবেন, তাদের ৪০ শতাংশেরও বেশি ইতিমধ্যে অন্তত একটি চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন। পড়াশোনা শেষ করার এক বছর আগেই চাকরির এ প্রস্তাব পেয়েছেন। এটি ২০১৬ সালের পর জাপানের স্নাতক সম্পন্ন করা তরুণদের সর্বোচ্চ চাকরি প্রাপ্তির হার।
জাপানের চাকরির বাজারে তরুণ কর্মীর এমন চাহিদার কারণ দেশটির কর্মী সংকট। বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিম্ন জন্মহারের কারণে দেশটির কর্মক্ষেত্রে তরুণ দক্ষ শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার আগেই তাদের নিয়োগের চেষ্টা করছে কোম্পানিগুলো। এর ফলে নবীন কর্মীরা দ্বিগুণ সুযোগ পাচ্ছেন।
গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, জাপানের শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করার আগেই একাধিক চাকরির প্রস্তাব বিবেচনা করছেন। এর ফলে কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভর্তুকিযুক্ত আবাসন সুবিধা এবং শিক্ষাঋণ পরিশোধে সহায়তাসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুবিধা দিচ্ছে। sজাপানের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোও এই প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে।
বিশ্বের অনেক দেশই জেন জির মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করছে। তবে জাপানে পরিস্থিতি বিশেষ খারাপ।
২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে জাপানের জন্মহার ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড ৫.৭ শতাংশ কমেছে। এতে জাপানের কোম্পানিগুলো বড় ধাক্কা খাবে। কর্মক্ষেত্রে আরও প্রকট হচ্ছে তরুণ প্রতিভার সংকট।
গত ৩০ বছরে জাপানে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণ কর্মীর সংখ্যা ৩৬ শতাংশ কমেছে। ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটিতে ১.১ কোটি কর্মী ঘাটতি হতে পারে বলে রিক্রুট ওয়ার্কস ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কর্মী সংকটের কারণে হিজাতসুকি কনফেকশনারি-র মতো জাপানের কিছু ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা সাধারণত কেবল জাপানি ভাষায় দক্ষ হওয়ায় বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ নিয়ে নিয়োগদাতারা বেশ সাবধানী। ফলে এখনও দেশীয় কর্মীদের নিয়োগ দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তারা।
এই পরিস্থিতি তরুণ জাপানি প্রতিভাবানদের জন্য সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয় সুবিধা দিয়ে তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।
জাপানের জেন জি কর্মীদের শুধু মোটা বেতনের প্যাকেজ এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নয়, অন্যান্য আরও অনেক সুবিধা দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
জাপানে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার খরচের চাপ সামলাতে কর্মীদের সাহায্য করতে ভর্তুকিযুক্ত আবাসন সুবিধার প্রস্তাব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০২২ সালের শেষ দিকে জাপানের মূল্যস্ফীতি ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছায়।
ব্যয় বৃদ্ধির চাপ সামলাতে দেশটির অন্যতম বৃহৎ বিমা প্রতিষ্ঠান নিপ্পন লাইফ পুরুষ কর্মীদের জন্য বিশেষ ডরমিটরি নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। ২০২৩ সালে টোকিও ডিজনিল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী এক অভিজাত আবাসিক এলাকায় ২০০ কক্ষের একটি ভবন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। নিপ্পন লাইফের কর্মীরা এখানে বাজারমূল্যের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ভাড়ায় থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া নারী কর্মীদেরও ভর্তুকিযুক্ত আবাসন সুবিধা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইতোচু ট্রেডিং হাউস তাদের পুরুষ কর্মীদের জন্য টোকিও অফিস থেকে আধঘণ্টার ট্রেনযাত্রার দূরত্বে নতুন একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছে। সেখানে কর্মীদের জন্য সকালের নাস্তা ও কর্মদিবসের রাতের খাবারের পাশাপাশি বার, ক্যাফের সুবিধাও রয়েছে। ২০২৫ সালে নারী কর্মীদের জন্যও একটি আবাসিক ভবন চালুর পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে আরেকটি জনপ্রিয় সুবিধা হলো শিক্ষাঋণ পরিশোধে সহায়তা। জাপান স্টুডেন্ট সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই সুবিধা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।উদাহরণস্বরূপ, টোকিও এনার্জি অ্যান্ড সিস্টেমস কর্মীদের মাসে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১২৭ ডলার) দিয়ে থাকে শিক্ষাঋণ পরিশোধের জন্য। এই সুবিধার সর্বোচ্চ সীমা ৩৬ লাখ ইয়েন (২২ হাজার ৮০০ ডলার)।
জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করছে। এই সুবিধাও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার ১.৬ লাখেরও বেশি কর্মী নিয়োগ দেয়। তারা চলতি বছরের এপ্রিল থেকে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করবে।