আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড
পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালত সোমবার (২০ জানুয়ারি) সঞ্জয় রায়কে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়েছেন, এই ঘটনা 'বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ' নয়। তাই মৃত্যুদণ্ড নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সঞ্জয়কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া রাজ্য সরকারকে নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বিচারক জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত এবং নির্যাতিতার পরিবার উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবে।
এর আগে শনিবার সঞ্জয় রায়কে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৩৭৬এ (ধর্ষণের সময় এমনভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), এবং ৩০২ (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন আদালত। সিবিআই এবং নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী অভিযুক্তের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আবেদন করলেও তা মেনে নেননি বিচারক।
সোমবার সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সঞ্জয় রায়কে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে শিয়ালদা আদালতে নিয়ে আসা হয়। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয় তাকে। আদালত চত্বর ঘিরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দু'জন ডেপুটি কমিশনার, পাঁচজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারসহ কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসার মোতায়েন ছিলেন।
সেই কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও প্রচুর মানুষ আদালত চত্বরে ভিড় করেন। অনেকেই রেলিং টপকে সঞ্জয়কে দেখার চেষ্টা করেন। তবে নিরাপত্তার বলয় ভেদ করে আসামিকে কার্যত দেখা যায়নি।
রায়ের আগের দিন সঞ্জয়ের আচরণ ছিল স্বাভাবিক। সূত্রের খবর, শনিবার কিছুটা চুপচাপ থাকলেও রবিবার সকালে সে স্বাভাবিক ছন্দে ছিল। খাবার খেয়েছে, ক্যারম খেলেছে এবং নিজের মতো ঘুরেছে। তবে দোষীসাব্যস্ত হওয়ার রাতে সে কিছু খায়নি।
নির্যাতিতার বাবা-মা আদালতের রায়ের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। তবে নির্যাতিতার মা সিবিআই তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, 'এই ঘটনায় শুধু একজন নয়, আরও অনেকে জড়িত। কিন্তু তাদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি সিবিআই। এমন অপরাধীদের সমাজে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।'
গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে জানা যায়, নৃশংসভাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে।
এই মামলায় প্রথমে কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও ১৩ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট তদন্তভার সিবিআইকে (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন; ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থা) দেয়। এরপর ৪ নভেম্বর মামলার চার্জ গঠন করা হয় এবং ১১ নভেম্বর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
৯ জানুয়ারি বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয় রায়কে দোষীসাব্যস্ত করা হয়। সোমবার ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে তার সাজা ঘোষণা করা হলো।