যেভাবে ঋণ খেলাপি হল পেনিনসুলা স্টিল
স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির জন্য চারটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের শিপ ব্রেকিং খাতের ব্যবসায়ী জাফর আলম। শর্ত ভঙ্গ করে সেই ঋণে দিয়ে গড়ে তুলেছেন স্টিল রিরোলিং মিল।
সেই মিলকে লাভজনক করতে না পারায় আটকে গেছে ব্যাংকগুলোর ৩০০ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে ২৫১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য সম্প্রতি অর্থঋণ মামলা করেছে দুটি ব্যাংক।
শিপ ব্রেকিং খাতের ব্যবসায়ী মো. জাফর আলম 'সুপার স্টিল' নামে ব্যবসা করে আসছেন ১৯৮৫ সাল থেকে। শুরুতে পার্টনার থাকলেও ২০০০ সালের দিকে এসে 'পেনিনসুলা স্টিল' নামে এককভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। জাহাজ ভাঙ্গার পাশাপাশি সাধারণ মানের রড উৎপাদনের জন্য গড়ে তোলেন পেনিনসুলা স্টিল রি-রোলিং মিল।
২০১৪ সালে স্ক্র্যাপ জাহাজ আনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জাফর আলম সেই অর্থ বিনিয়োগ করেন রি-রোলিং মিলে। সাধারণ মানের মিলকে সেমি অটোতে রুপান্তর করতে এই অর্থ ব্যয় হয়।
দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধ না করায় গত ২৮ অক্টোবর প্রায় ১৯৩ কোটি খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য পেনিনসুলা স্টিলের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ওয়ান ব্যাংক। মামলায় জাফর আলম, তাঁর স্ত্রী রাশেদা জাফর, সহোদর আবু আলম ও ছেলে জুনায়েদ আলমকে বিবাদী করা হয়েছে।
ওয়ান ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করতে তাদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ নেয় পেনিনসুলা স্টিল। শর্ত ভঙ্গ করে এই ঋণ দিয়ে রি-রোলিং আপগ্রেড করা হয়। শুরুতে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন ভালো থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন না তিনি।
বহু চেষ্টায়ও ঋণ ফেরত না পেয়ে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর পেনিনসুলার বন্ধক রাখা ২০০ শতক সম্পত্তি নিলামে তোলে ওয়ান ব্যাংক। কিন্তু ভালো দাম না ওঠায় সম্পত্তি বিক্রি করা সম্ভব হয় নি। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কাছে সুদাসলে ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৯৩ কোটি টাকা।
প্রায় ৫৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে পেনিনসুলার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে গত ৩ নভেম্বর আরো একটি মামলা করেছে ইস্টার্ন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা।
এই দুই ব্যাংক ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির কাছে ঢাকা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার ৩৬ কোটি ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ১০ কোটি টাকা পাওনা আছে।।
ঢাকা ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির জন্য নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরুতে নিয়মিতই ছিল। কিন্তু গত তিন-চার বছর ধরে কিস্তি পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেন জাফর আলম। ঋণটি পুন:তফসিল করেও কোনো লাভ হয়নি।
ঋণের বিপরীতে ঢাকা ব্যাংকের কাছে পেনিনসুলা ইয়ার্ডের ১০০ শতক জমি বন্ধক আছে। তবে পাওনার বিপরীতে এই সম্পত্তির মূল্য খুবই অল্প বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সিনিয়র এসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আগ্রাবাদ শাখার প্রধান মোহাম্মদ বেলাল জানান, 'পেনিনসুলা স্টিলের কাছে আমাদের পাওনা প্রায় ১০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির পর্যাপ্ত সম্পত্তি আমাদের কাছে বন্ধক রাখা আছে। এ কারণে ঋণ আদায়ে আমরা সমস্যায় পড়বো না।'
প্রায় দুই বছর ধরে পেনিনসুলা স্টিল রি-রোলিং মিলে কোন উৎপাদন নেই। কারখানাটি ঢাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে। আর অনেক আগে থেকেই পেনিনসুলার ইয়ার্ডে বন্ধ আছে জাহাজ কাটার কাজ।
ফোনে পেনিনসুলা স্টিলের মালিক জাফর আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।