রোমাঞ্চ আর লিটনের ম্যাচে চট্টগ্রামের চারে চার
ক্ষণে ক্ষণে পাল্টালো ম্যাচের রং। রাজশাহীর একেকজন ব্যাটসম্যানের ক্ষণিকের ঝড়ে বারবার জয়ের আশায় বুক বাধলো দলটি। এভাবে আশা-নিরাশার দোলাচলের খেলা চললো কিছুটা সময়। কিন্তু শেষ ওভারের রোমাঞ্চে দারুণ এক জয় তুলে নিলো বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।
শেষ ওভারে ১৪ রানের দরকার থাকলেও রনি তালুকদার তুলতে পেরেছেন ১২ রান। তাতে ১ রানের রুদ্ধশ্বাস জয় জমা হয় চট্টগ্রামের ঝুলিতে। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ হারেনি মোহাম্মদ মিঠুনের। চার ম্যাচ খেলে চারটিতেই জয় তুলে নিয়েছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দলটি।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়ে সৌম্য সরকার বিদায় নিলেও ম্যাচসেরা লিটন দাসের ব্যাট হেসেই গেছে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সেরা ৭৮ রান করার দিনে দলকে ৫ উইকেটে ১৭৬ রানে পৌঁছে দেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। যা চলতি টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
জবাবে দাপুটে শুরু করেন মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীও। আনিসুল ইসলাম ইমন ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে রোখ রাঙাতেই রাঙাতেই এগোতে থাকে রাজশাহী। কিন্তু এই জুটির ভাঙনে একই গতিতে আর এগোনো হয়নি তাদের। অবশ্য ইমনের লড়াইয়ের পর মাহেদী হাসান, রনি তালুকদারের ব্যাটে বারবার জয়ের আশা জেগেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৭৫ রানে থেমে যেতে হয় তাদের।
জয়ের লক্ষ্যে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন রাজশাহীর দুই ওপেনার ইমন ও শানন্ত। প্রথম ৫ ওভারে ৫১ রান যোগ করেন এ দুজন। পরের ওভারেই ঘটে ছন্দপতন। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা শান্ত উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। এরআগে ১৪ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ রান করেন রাজশাহীর অধিনায়ক।
এ সময় রান তোলার গতিও কমে আসে। নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুলকে সঙ্গে নিয়ে দলকে কক্ষপথে ফেরানোর চেষ্টা করেন হাফ সেঞ্চুরি করা ইমন। কিন্তু শুরুতে যে ছন্দে চার-ছয় মেরেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, পরের দিকে সেটা পারেননি। ঠিকমতো ব্যাটে-বলেই করতে পারছিলেন না তিনি।
দলীয় রান ১০০ ছোঁয়ার পর আউট হন আশরাফুল। ১৯ বলে ২০ রান করে থামেন তিনি। এরপর সাজঘরে ফেরেন খেই হারানো ইমনও। ৪৪ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ওপেনার। এরপর ফজলে মাহমুদ, মাহেদী হাসানদের ছোট ছোট ইনিংসে ম্যাচ গড়ায় শেষ বল পর্যন্ত। ফজলে মাহমুদ ১১ ও মাহেদী ২৫ রান করেন।
শেষের দিকে ফরহাদ রেজা ৫ বলে ১২ রান করে সম্ভাবনা জিইয়ে রাখেন। শেষ ওভারে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ১৪ রানের। মুস্তাফিজর রুহমানের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে কোনো রানই নিতে পারেননি রনি তালুকদার। তবে চতুর্থ বলে ছক্কা ও পঞ্চম বলে চার মেরে দলকে লক্ষ্যের খুব কাছে নিয়ে যান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। যদিও শেষ বলে ২ রান নেওয়ায় এক রানের ব্যবধান থেকেই যায়। ৩৭ রান খরচায় মুস্তাফিজ ৩টি উইকেট নেন। এ ছাড়া শরিফুল ২টি এবং মোসাদ্দেক ও জিয়াউর একটি করে উইকেট নেন।
এরআগে সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের ব্যাটে শুরুটা দারুণ হয় চট্টগ্রামের। মারকুটে স্টাইলে উদ্বোধনী জুটিতে ৬২ রান যোগ করেন তারা। সৌম্য ২৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৪ রান করে ফিরলেও ম্যাচসেরা লিটন থাকেন অবিচল। চেনা ছন্দে অনিন্দ সুন্দর সব শট খেলে যেতে থাকেন ডানহাতি এই ওপেনার।
অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন উইকেট বেশি সময় থাকতে পারেনননি। ১১ রান করে বিদায় নেন তিনি। পারেননি শামসুর রহমান শুভও। বাকিটা সময় লিটন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত দলের স্কোরকার্ডকে সমৃদ্ধ করেছেন। পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করা লিটন ৫৩ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৮ রানের হার না মানা এক ইনিংস খেলেন। যা চলতি আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত খুনে স্টাইলে ব্যাটিং করেছেন। ২৮ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪২ রান করেন তিনি। রাজশাহীর মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। এ ছাড়া ফরহাদ রেজা ও আনিসুল ইসলাম ইমন একটি করে উইকেট পান।