আমদানি বজায় রাখতে দুর্নীতি এড়াতে হয়: এনবিআর চেয়ারম্যান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন আমদানির কাজ সাবলীল চলার জন্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের মাঝে মাঝে অনেক দুর্নীতির ব্যাপার এড়িয়ে যেতে হয়।
তিনি বলেন, শুল্ক কর্মকর্তারা যদি পুরোপুরি স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করে, সঠিক ওজন মেপে সঠিক শুল্ক আরোপ করে তাহলে আমদানি-রপ্তানির কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে, কেননা তখন ব্যবসায়ীরাই অংশগ্রহণ করতে চাইবে না।
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের এক আলোচনা সভায় এ কথা জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “সাধারণ মানুষ বলরে, সরকারি চাকরিজীবীরা ঘুষ খায়, অমুকে খায়, তমুকে খায়। যদি সুবিধা পায়, কোন মানুষটা খায় না?”
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দেখি, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে দুর্নীতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এরকম হয়, সে কাগজে লিখবে ৫০ টন মাল আমদানি করছি। কিন্তু আসলে আনবে ৭০ টন। ৫০ টনের শুল্ক দিয়ে বের করে নিয়ে যেতে চাইবে ৭০ টন। তারপর বলবে গামছা আনছি; কিন্তু আনবে স্যুটের কাপড়। কমদামি কাপড় আনার ঘোষণা দিয়ে আনবে দামি দামি কাপড়।”
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “রফতানির জন্য যেসব কাপড় আনা হয়, সেসব কাপড়ে ডিউটি-ফ্রি সুবিধা রয়েছে। তারা ডিউটি-ফ্রি কাপড় আমদানি করে গার্মেন্টসে পোশাক তৈরির পর রফতানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আনবে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা সরকারকে দিয়ে দেবে না তারা। এজন্য সরকার তাদের সমান টাকা দিয়ে দেবে। লাভটা তারাই ভোগ করবে।”
তিনি বলেন, “এ সুযোগ নিয়ে ডিউটি-ফ্রি কাপড় এনে সে পোশাক তৈরির পর রপ্তানি না করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেয়। সরকারকে প্রায় ৫০ শতাংশ ট্যাক্স না দিয়ে এনে এটা দেশেই বিক্রি করে দেয়। এতে অনেক লাভ। কারণ সে ট্যাক্স বাবদই ৫০ শতাংশ ছাড় পেয়েছে। এসবের জন্য ইসলামপুর, নয়াবাজার, তাঁতিবাজার—এরকম কত বাজার গড়ে উঠেছে, শুধু এধরনের বন্ডের কাপড় দিয়ে। শুধু ঢাকায় না, চট্টগ্রাম, খুলনা—সব জায়গায়।”
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের দেশে কর দেওয়ার সামর্থ্য রাখে, এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। অথচ আয়কর রিটার্ন জমা দেয় মাত্র ২০-২২ লাখ মানুষ।”
“এতকিছুর পরও ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সালে আমাদের জাতীয় আয় বেড়েছে চারগুণ। আগামী ২০৩০ সালে এটা আরও চারগুণ বাড়বে।”
তিনি আশাহত হতে নিষেধ করেন মোশাররফ হোসেন, তিনি বলেন দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের সবাইকে সৎপথে কাজ করে যেতে হবে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক সুরাইয়া রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সক্রিয় সদস্যদের মুক্ত চিন্তা, সুস্থ মানসিক গঠন ও মননশীলতা তৈরির লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন প্রতিমাসে এ ধরনের মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে। এটি ছিল মুক্ত আলোচনার ৯৩তম পর্ব।