অনাবাসীদের সঞ্চয় বন্ডে বিনিয়োগ সীমা কমল, বাতিল সিআইপি সুবিধা
অনাবাসী (নন-রেসিডেন্ট) বাংলাদেশিদের জাতীয় সঞ্চয় বন্ডে বিনিয়োগের সীমা কমানো হয়েছে। পাশাপাশি এই বন্ডে বিনিয়োগ করলে তারা যে সিআইপি (কমার্শিয়ালি ইমপরটেন্ট পারসন) সুবিধা পেতেন, তাও বাতিল করা হয়েছে।
এতোদিন অনাবাসী বাংলাদেশিরা ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা, মার্কিন ডলারের প্রিমিয়াম ও ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে আলাদা আলাদাভাবে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার করে বিনিয়োগ করতে পারেন।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এই তিনটি বন্ডে একত্রে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা বা তার সম-পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করা যাবে।
এসংক্রান্ত অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন আজ সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সার্কুলার আকারে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোভিডের কারণে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি ধীর। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেও সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণও গেল বছরের তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে, রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবাহের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে আছে।
তিনি বলেন, সরকারের হাতে এখন অনেক টাকা আছে। ব্যয়ের চাপও কম। তাই হয়তো অনাবাসীদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ এই বন্ডে বিনিয়োগ করলে সঞ্চয়পত্রের মত সরকারকে উচ্চ-সুদ দিতে হয়।
তবে কোভিড পরবর্তী অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াবে তখন সরকারের টাকার প্রয়োজন পড়লে অনাবাসীদের জন্য আবার হয়তো আগের সুবিধা চালু করা হতে পারে, বলে তিনি জানান।
এতোদিন কোন অনাবাসী ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ৮ কোটি টাকা, মার্কিন ডলারের প্রিমিয়াম ও ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে আলাদাভাবে ১০ লাখ মার্কিন ডলার করে বিনিয়োগ করলে সিআইপি মর্যাদা পেতেন।
এখন থেকে এই মর্যাদা আর দেওয়া হবে না বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে জানানো হয়েছে। এধরনের বিনিয়োগকারীদের সিআইপি হিসেবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত নীতিমালাও বাতিল করা হয়েছে।
বন্ডে বিনিয়োগকারী সিআইপিরা ১ বছরের জন্য সচিবালয়ে প্রবেশকার্ড ও গাড়ির স্টিকার, সরকারি সেবার পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার, জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ পাওয়া, সড়ক, নৌ ও আকাশপথে ভ্রমণে আসন সংরক্ষণ, বিমানবন্দরে ভিআিইপি লাউঞ্জ ব্যবহারসহ মোট ৭ ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এদিকে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা সম্পর্কিত একটি সার্কুলারও জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই সীমায় ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রে একত্রে, এক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা যায়।
এই বিনিয়োগ সীমা গত ৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হলেও এই সার্কুলারের মাধ্যমে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হলো।
আগে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে এক নামে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে এক নামে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে ৬০ লাখ এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রে এক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যেত।
চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্থবছরের প্রথম চার (জুলাই-অক্টোবর) মাসেই সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গেল বছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।