নিজেরাই ভ্যাকসিন কিনছে ঢাকার এলিট ক্লাবগুলো
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য সরকারের ওপর নির্ভর না করে ক্লাবের মেম্বার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন কিনছে এলিট ক্লাবগুলো। বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের মাধ্যমে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন কিনছে তারা। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য এরইমধ্যে ক্লাবগুলো মেম্বারদের তালিকা সংগ্রহ শুরু করেছে।
ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট খায়রুল মাজিদ মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ঢাকা ক্লাবের মেম্বারদের জন্য সিরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আনা হবে। এজন্য মেম্বারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরা ক্লাবের মেম্বার মোহাম্মদ নাসির বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ক্লাব থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে আমাদেরকে জানানো হয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য ফ্যামিলি মেম্বারসহ একটি তালিকা জমা দিতে।
মেম্বারদের বেক্সিমকোর ভ্যাকসিন দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট তারিকুর রহমান মিলন।
উত্তরা ক্লাবের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমরা দুই হাজার পারসন অর্থাৎ চার হাজার ডোজ ভ্যাকসিনের চাহিদাপত্র পেয়েছি। এছাড়া উত্তরা ক্লাব তাদের স্টাফদের জন্যও ভ্যাকিসিন আনবে। সে তালিকা এখনো করা হয়নি।
আমিনুল ইসলাম বলেন, বেক্সিমকোর সাথে ভ্যাকসিনের বিষয়ে আমাদের আলোচনা অনেক এগিয়েছে। তবে বেক্সিমকো এখনো আমাদের নিশ্চিত করেনি কত ডোজ ভ্যাকসিন তারা আমাদের দেবে।
গুলশান ক্লাবও তাদের মেম্বার ও পরিবারের সদস্যদের জন্য ভ্যাকসিন কিনছে বলে জানা গেছে।
সরকারিভাবে দেশে করোনাভাইরাসের যে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আনার পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের জন্য ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আনবে বেক্সিমকো।
এ বিষয়ে বেক্সিমকোর চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রাইভেট সেক্টরের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাব ও কমিউনিটি ভ্যাকসিনের জন্য আমাদের কাছে রিকুয়েস্ট করেছে। আমরা সবার রিকুয়েস্ট নিচ্ছি। যাদের সামর্থ্য আছে তারা যদি বেসরকারিভাবে নিজেরাই ভ্যাকসিন কিনে নেয় তাহলে সরকারের ওপর চাপ কমবে।
তিনি বলেন, তবে কে কত ভ্যাকসিন নেবে সে বিষয়টি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। প্রাইভেট সেক্টরের জন্য প্রথম দফায় যে দশ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে সেটিই প্রায়োরিটি ভিত্তিতে সবাইকে দেয়া হবে। বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য এখন পর্যন্ত কোন অর্থ লেনদেন হয়নি বলে জানান তিনি।
অক্সফোর্ড থেকে আনা এই ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১২০০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে সরকারী অন্যান্য চার্জ।
অনুমোদন পাওয়ার পর প্রথম দফায় ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দেশে আসবে। প্রত্যেককে এই ভ্যাকসিনের দুটি করে ডোজ নিতে হবে। প্রথম দফায় ২৫ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন পাবে। প্রথম দফায় স্বাস্থ্য সেবা কর্মী, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা,ব্যাংকার, জনপ্রতিনিধি, ইমিউনো কম্প্রোমাইজড রোগীসহ জরুরি পেশার ফ্রন্টলাইনার্সরা ভ্যাকসিন পাবেন। সাধারণ মানুষের ভ্যাকসিন পেতে দেরি হবে। তাই সামর্থবানরা সরকারের ওপর নির্ভর না করে নিজেরাই বেসরকারি ভাবে ভ্যাকসিন কিনছে।
বেক্সিমকো সূত্রে জানা যায়, প্রথম ফেজে বেসরকারিভাবে যে দশ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে তার মধ্যে প্রায়োরিটি বেসিসে প্রাইভেট সেক্টর ও এলিট ক্লাবগুলো ভ্যাকসিন পাবে। সরকার নির্ধারিত সেন্টার থেকে সবাই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেবে।
বেসরকারি ভাবে ভ্যাকসিন আনা হলেও ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকবে।
রাব্বুর রেজা বলেন, সরকার নির্ধারিত যেসব সেন্টারে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেখানেই আমরা বেসরকারিভাবে যারা ভ্যাকসিন নিবে তাদের সেট করে দেবো। বেসরকারিভাবে যারা ভ্যাকসিন পাবে তাদের তালিকাও সরকারের কাছে থাকবে।
দ্য সানডে টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বানানো কোভিড-১৯ টিকার ভ্যাকসিনেশন শুরু হবে।
রাব্বুর রেজা বলেন, ইউকের পাশাপাশি একই সময়ে ভারতও অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ইমার্জেন্সি অথোরাইজেশন পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপরই ইউকে ও ভারত ডব্লিউএইচওতে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে। তারা ডব্লিউএইচওতে এরইমধ্যে বিভিন্ন ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে।
ইউকে ও ভারতে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ইমার্জেন্সি অথোরাইজেশন পেলে বেক্সিমকো বাংলাদেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করবে।
রাব্বুর রেজা বলেন, আমরা ইউকে ও ভারতের সব ডকুমেন্ট ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে জমা দিবো। তারা সব যাচাই বাছাই করে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
ভ্যাকসিন দেশে আসার পর প্রথম নিজস্ব কোল্ড চেইনের মাধ্যমে সেগুলো সংরক্ষণ করবে বেক্সিমকো। এরপর সেগুলো নির্ধারিত সরকারি ওয়্যার হাউজে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।