স্যাটেলাইটে ধরা পড়লো বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় নতুন চীনা গ্রাম
চীনের সামরিক বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে যে চীনের সীমান্ত এলাকায় প্রায় ১০০ টি নতুন ঘর তোলা হয়েছে। সারা দেশজুড়ে দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পের অধীনে এই ঘরগুলো তৈরি করা হয়।
ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশে সম্প্রতি পুরো একটি নতুন গ্রাম তৈরি করেছে চীন।
অরুণাচল প্রদেশের এই সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে। ২০২০ সালের ১ নভেম্বর স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি চীনা স্যাটেলাইটের ধারণকৃত কিছু ছবি প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে সারি চু নদীর তীরে এই গ্রামটি গড়ে তোলা হয়েছে এবং সেখানে প্রায় ১০০ টি ঘর রয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার একটি প্রতিবেদন বলছে, এই ঘরগুলোর বেশিরভাগই গত বছরের অক্টোবরের দিকে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন যে এটি গ্রামাঞ্চলে দারিদ্য হ্রাসকরণের জন্য বেইজিং এর নেয়া একটি প্রকল্পের অধীনে করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, "মিলিটারিরা নতুন রাস্তা তৈরির ফলে স্থানীয় তিব্বতীয়রা ত্রাণের যে অর্থ পেয়েছিল তা দিয়ে ঘর বানানোর ভালো সুযোগ পেয়েছে।"
নয়াদিল্লি অরুণাচল প্রদেশকে তাদের ভারতীয় রাজ্য বলেই দাবি করে থাকে। কিন্তু এদিকে বেইজিং ও এর ৯০ হাজার কিলোমিটার এলাকাকে দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।
বছরের পর বছর ধরেই চীন ও ভারত এই সীমান্ত দখল নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে আছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় যখন গত বছরের জুনে দুই পক্ষের সৈনিকরা গালওয়ান উপত্যকায় এক প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকেই এই অঞ্চলে কড়া সেনা মোতায়েন রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে তারা ভারতের সাথে বিবাদমান চীন সীমান্তে চীনের এই নতুন নির্মানকাজ সম্পর্কে অবগত ছিল। সেই সাথে ভারতও অরুণাচল প্রদেশে সীমান্ত এলাকায় ব্রিজ, রাস্তাসহ নতুন নতুন অবকাঠামো তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে।
২০১৭ এর এক ডকুমেন্ট থেকে এও জানা গেছে যে চীন সীমান্ত এলাকায় স্বশাসিত তিব্বতীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করতে ৬২৪ টি গ্রাম বানানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
২০২১ সালের মধ্যেই 'মডারেটলি ওয়েল-অফ' সমাজ তৈরি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই প্রকল্পে তিনি ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়নও করেছেন নতুন নতুন বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল ও অবকাঠামো নির্মাণ করতে।
ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া স্টাডিস বিভাগের পরুচালক ঝ্যাং জিয়াডং বলেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভারত দুই পক্ষই সীমান্ত এলাকায় নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে।"
তবে লানঝু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জিয়াং এর মতে চীন শুধুই নিজেদের দেশের নানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই অবকাঠামোগুলো তৈরি করছে।
এছাড়াও ডিসেম্বরে ভারতীয় গণমাধ্যম আরেকটি রিপোর্টে দেখায় যে চীন পাংডা অঞ্চলে ভারত-ভুটান-চীন সীমান্তের ১০ কিলোমিটার পূর্বে ভুটান সীমান্তের ভেতরে গিয়েও আরেকটি ২.৫ কিলোমিটার বিস্তৃত চীনা অবকাঠামো বানিয়েছে।
দিল্লীর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক একজন বিশিষ্ট গবেষক, সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ এর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস এর অধ্যাপক ব্রক্ষ্ম চেলানি মন্তব্য করেন, "বিবাদমান সীমান্ত এলাকায় বেইজিং এর এই গ্রাম তৈরি প্রকল্প তাদের আগ্রাসী মনোভাবেরই পরিচয় দিচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকদের জন্যে বাড়িঘর বানিয়ে তারা আন্তর্জাতিকভাবে এই অঞ্চলকে নিজেদের দাবি করার একটি ভিত্তি তৈরি করছে যার আপাতত কোনো আইনি অবস্থান নেই। চীনের এই গ্রাম গ্রাম তৈরি প্রকল্প দেখিয়ে দিচ্ছে যে কীভাবে তারা ভারত, ভুটান ও নেপালের অঞ্চলগুলোর মধ্যে অনধিকার প্রবেশের জন্য সাউথ সী মডেল ব্যবহার করছে।"