শিক্ষায় যে পরিবর্তন আসছে তাতে সহযাত্রী হবে শিল্পখাত: শিক্ষামন্ত্রী
শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল তৈরিতে শিক্ষাখাতে সরকার পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করেছে। এই কাজে দেশের শিল্পখাতও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযাত্রী বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত 'ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংকেজ: দ্য নিয় ফ্রন্টিয়ার' ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরি করতে শিল্প মালিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি কার্যকর যোগসূত্র তৈরি করতে হবে।'
বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প মালিকদের মধ্যে সংযোগ বাড়াতে মানসিকতার পরিবর্তন আনার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, 'দুই পক্ষকেই নিজেদের প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝতে হবে।'
শিল্পের জন্য কী ধরনের জনবল প্রয়োজন এবং জনবল তৈরিতে শিক্ষা কারিকুলামে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, সে বিষয়ে একটি ম্যাপিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'সকলের জন্য বিএম, এমএ বা বিবিএ এমবিএ ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। এতে সম্পদের অপচয় হচ্ছে।' দেশের চাহিদা অনুযায়ী কারিগরী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'ইতোমধ্যে যারা কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, তাদের দক্ষতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুযোগ আরও বাড়াতে হবে।'
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, 'শিল্প মালিক ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কার্যকর যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। সভা সমিতিতে অনেকে অনেক ধরনের প্রতিশ্রুতি এবং পরামর্শ দেন, কিন্তু পরবর্তীকালে সেগুলো আর আলোর মুখ দেখে না।'
তিনি বলেন, 'শিল্প মালিকদের শিক্ষা ক্ষেত্রে সিএসআর কার্যক্রম বাড়াতে হবে। ইউজিসি যেসব ক্ষেত্রে ফেলোশিপ দিচ্ছে তাতে সহায়তা করতে পারেন। বিশেষ করে ওষুধ, চামড়া ও তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা তাদের শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন গবেষণার জন্য সহায়তার হাত বাড়াতে পারেন।'
মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান আরও জানান, শিল্পের প্রয়োজনে কারিকুলাম পরিবর্তনের পক্ষে আছেন তারা। তবে পরিবর্তনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আসতে হবে।
আলোচনায় মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, 'গবেষণা ও উন্নয়নখাতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা যে অর্থ ব্যয় এবং শিক্ষাখাতে যারা অর্থ দান করেন, দুটোকেই করমুক্ত রাখা উচিত।'
তিনি বলেন, 'সরকারকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তেমনি গবেষণার ক্ষেত্রে ফ্রিডম অব থট নিশ্চিত করতে হবে।'
গবেষণার বাণিজ্যিকীরণের ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডর চেয়ারম্যান সবুর খান। তিনি বলেন, 'আমরা শুধু গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি, কিন্তু তাদের চাকরির যোগ্য করে তৈরি করছি না।' এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ঢাকা চেম্বারকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে কো-অর্ডিনেশন করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির আহ্বানও জানান সবুর খান। পাশাপাশি দেশের মেধাবীদের বেসরকারিখাতে উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত হয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার টেকসই গবেষণার ওপর জোর দিয়েছেন। এজন্য অবকাঠামো নির্মাণ করার পাশাপাশি কার্যকর গবেষণা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'এমন গবেষণায় অর্থ খরচ করা যাবে না, যা দেশের উন্নয়নে কাজে আসে না।'
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, 'চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে নতুন রূপান্তর ঘটছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান রূপান্তরের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি সম্ভব নয়।'