প্লাজমা ফ্রাকশানেশন প্ল্যান্ট স্থাপনে চিকিৎসা ব্যয় কমবে রোগীদের
দেশে প্লাজমা ফ্রাকশানেশন বা প্লাজমা বিশ্লেষণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে ক্যান্সার, পুড়ে যাওয়া, লিভার ডিজিজসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা উপকৃত হবেন। এর ফলে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমবে। এটি দেশের জন্য একটি বড় সুসংবাদ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বায়োমেডিক্যাল বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক লিয়াকত আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এটি খুবই প্রয়োজনীয়। ক্যান্সার, লিভার ডিজিজসহ বিভিন্ন রোগে প্লাজমার বিভিন্ন ফ্রাকশন- অ্যালবোমিন, গ্লোবেলিন, প্ল্যাজমা প্রোটিনের বিভিন্ন ধরনের ফ্রাকশনের প্রয়োজন হয়। যদি এই ফ্রাকশন বাংলাদেশেই উৎপন্ন করা যায়, বায়োলোজিক্যাল সেপারেশন করা যায় এবং সেগুলো বাজারজাত করা হয় তাহলে আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে'।
লিয়াকত আলী বলেন, 'লিভার ডিজিজ, ক্যান্সার এবং যেসব ডিজওর্ডারে প্ল্যাজমার ডিফারেন্ট ফ্রাকশন প্রভাবিত হয়, অ্যালবোমিন ফ্রাকশন কমে যায় সেসব রোগের চিকিৎসায় অত্যন্ত উপকারী হবে এ প্ল্যান্ট। কারণ অ্যালবোমিন, গ্লোবেলিন আমদানি করা অনেক ব্যয়বহুল। এগুলো যদি দেশে তৈরি হয় তাহলে সেটি অনেক বড় সুসংবাদ'।
প্লাজমার মধ্যে অন্যতম উপাদান অ্যালবোমিন। ৭৫% অ্যালবোমিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত হয় আর বাকী ২৫% উৎপাদিত হয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের দেশের বাইরে অ্যালবোমিন রপ্তানি করা বন্ধ করে দেয় তাহলে পৃথিবীতে অ্যালবোমিন সংকট দেখা দিবে। তাই প্রতিটি দেশ চেষ্টা করে নিজেদের দেশে প্লাজমা প্ল্যান্ট তৈরি করার।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্সটিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অনেক দিনের একটি চাওয়া ছিলো বাংলাদেশে এমন কিছু হোক। লিভার, বার্নের রোগীসহ বিভিন্ন রোগীদের অ্যালবোমিনের প্রয়োজন হয়। বাণিজ্যিকভাবে এটি বাজার থেকে কিনতে হয়, যা ব্যয়বহুল। এছাড়া প্লাজমা দিয়ে আরো অনেক উপাদান তৈরি করা যায়। আমাদের দেশে এগুলো উৎপাদিত হলে দেশের মানুষ স্বল্পমূল্যে তা পাবে, ফলে চিকিৎসা ব্যয় কমে যাবে'।
তবে বাংলাদেশে কোন সেন্ট্রাল সেইফ ব্লাড সেন্টার না থাকার কারণে প্লাজমা ফ্রাকশানেশন প্ল্যান্টের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে বলে জানান ডা. আশরাফুল হক।কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় দেশের প্রথম প্লাজমা ব্যাংক স্থাপনে তার অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, 'অন্যান্য দেশে যে হাসপাতালেই ব্লাড সংগ্রহ করা হোক সেটি কেন্দ্রীয়ভাবে চলে যাবে। কেন্দ্র বা সেন্ট্রাল থেকে প্রসেস করে যেটিকে বিভিন্ন উপাদানে ভাগ করে যার যার যতটুকু চাহিদা সেই স্টোরে পাঠিয়ে দেয়া হয়, যা সেন্ট্রাল ফরমেট থাকে। আমাদের দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে কোন ব্লাড ব্যাংক নেই। আমাদের একেকটি ব্লাড ব্যাংক একেকভাবে পরিচালিত হয়। সেক্ষেত্রে গুণগত মানসম্মত প্লাজমা সংগ্রহ করাই বড় ঝামেলা। যদি সারা দেশ থেকে এক জায়গায় ব্লাড না আসে তাহলে প্লাজমার যে উপাদানগুলো তৈরি করা হবে তার জন্য প্লাজমা প্ল্যান্টে সাপ্লাই পাওয়া যাবেনা। সাপ্লাই যেহেতু পাওয়া যাবেনা উপাদানগুলো তৈরি করা সম্ভব হবে না। যে উদ্দেশ্যে প্ল্যান্ট তেরি করা হচ্ছে, তার জন্য প্রয়োজন একটি সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাংক স্থাপন'।