চট্টগ্রাম বন্দরে বাড়ছে কন্টেইনার জট; ৮ মার্চ থেকে দ্বিগুন জরিমানা
কন্টেইনার ডেলিভারিতে ধীরগতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট প্রতিদিনই বাড়ছে। আগামী রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানি হওয়া ভোগ্য পণ্যবাহী কন্টেইনার খালাস না নেওয়ায় এই জট সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে তাই আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে বন্দর থেকে ফুল লোড কন্টেইনার (এফসিএল) ডেলিভারি নিতে দুটি নোটিশ জারি করে। এতে বন্দরের কন্টেইনার পৌছার ১১ দিনের মধ্যে ডেলিভারি না নিলে বর্তমান নির্ধারিত জরিমানার দ্বিগুন জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১ মার্চ থেকে জরিমানার বিধান কার্যকরে নোটিশ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে ১ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ৮ মার্চ থেকে দ্বিগুন জরিমানা কার্যকরের সিন্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কন্টেইনার জট কমাতে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে জরিমানার বিধান আরো ১ সপ্তাহ পেছানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ১৫ ভাগ খালি রাখতে হয়। সেটি করা না গেলে বন্দরের ভেতরে কন্টেইনার পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ী চলাচল ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। দুর্ঘটনার আশংকা তৈরী হয়।
বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার ধারন ক্ষমতা ৪৯,০১৮ টি। ১ মার্চ সকাল ৮ টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ৩৯,৭৭৮ টি। সেটি বন্দরের ধারন ক্ষমতার প্রায় ৭৭ভাগ। ২৮ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ধারন ক্ষমতার ৮২ ভাগ ৪০৩৭৭ টি।
বন্দরের পোর্ট পারফরমেন্স এর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের শুরুতে ১ জানুয়ারি বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ৩৬,৩০৬ টি। ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সংখ্যা কমে দাড়ায় ৩২,৭০৬ টি। এরপর থেকে বাড়তে থাকে বন্দরের কন্টেইনারের সংখ্যা। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সংখ্যা দাড়ায় ৩৩৭৯৯। এক মাসের ব্যবধানে কন্টেইনার সংখ্যা বাড়ে ১০৯৩ টি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ট্রাফিক এনামুল করিম স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বন্দর থেকে দৈনিক কন্টেইনার ডেলিভারির ক্ষেত্রে ধীরগতির কারনে বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম নিরবিচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে কমন ল্যান্ডিং তারিখ এর পর ১১ তম দিন হতে প্রযোজ্য স্লাব এর স্বাভাবিক ভাড়ার উপর দুইগুন হারে স্টোর রেন্ট আরোপ করা হলো।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বন্দরে কন্টেইনার জট কমাতে ১১ তম দিনের পর স্টোর রেন্ট দ্বিগুন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২৮ ফেব্রুয়ারি এই সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। তবে সেটি ২ মার্চ স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ৮ মার্চ থেকে সেটি কার্যকর হবে।
বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ৪ দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এর পর ২০ ফুট লম্বা সাইজের একটি কন্টেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ ইউএস ডলার ভাড়া গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন একই সাইজের কন্টেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের।
সেই হিসেবে ২০ ফুট সাইজের একটি কন্টেইনারের ১১ দিন পর পরবর্তী ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ১২ ডলারের পরিবর্তে ২৪ ডলার এবং ২১ দিন পর ২৪ ডলারের পরিবর্তে ৪৮ ডলার জরিমানা দিতে হবে।
বন্দর সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের ইয়ার্ড থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। কিন্তু বর্তমানে সেটি নেমে এসেছে ৩ হাজারের কোটায়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এবং ১ মার্চ ডেলিভারি হয়েছে ৩,১৬২ টি কন্টেইনার। ২৮ ফেব্রুয়ারি ৩,৫৮১ টি এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি ৩,৫৭২ টি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরের কার্যক্রম সপ্তাহের সব সময় সচল থাকলেও শুক্র ও শনিবার ব্যাংক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকে। তাই শুক্র, শনি ও রবিবার পণ্যছাড় কমে যায়। ছুটির দিনে কাস্টমস শুক্রবার পণ্যের নিরীক্ষা করে না। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বন্দর ব্যবহারকারী গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো সচল না থাকলে ডেলিভারি অবস্থার উন্নতি হবেনা।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি কন্টেইনার জট কমাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বিগুন পরিমানার বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করবে। অন্যকোন পন্থা অবলম্বন করে এই সমস্যার সমাধান করা গেলে ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা উপকৃত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ে। ব্যবসায়ীদের নিজস্ব গুদাম না থাকায় তারা বন্দরের ইয়ার্ডকেই ব্যবহার করেন। ফলে প্রতিবছর রমজান এলে একই ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চাক্তাই আড়তদার সমিতির সভাপতি আহছান খালেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অনেক আমদানিকারক বাজারে পণ্য বৃদ্ধির আশায় আমদানির পরও পণ্য বাজারজাত করেননা। রমজানে শুকনা পণ্যের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, অনেক সময় বন্দরে পণ্য আসার পরও ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে পণ্য খালাস নেওয়া সম্ভব হয়না। অন্যদিকে করোনার সংকটও কাটেনি। এমন সময়ে ১১ দিন হতে দ্বিগুন স্টোর রেন্ট আরোপের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্তটি বন্দর কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় আনা উচিৎ। একইভাবে আমদানিকারকেরদও সঠিক সময়ে বন্দর থেকে পণ্য খালাস নিশ্চিত করতে হবে।