রাতভর অভিযানের পরেও রবিবার মিয়ানমারের রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী
শনিবার গভীর রাতে মিয়ানমার বিক্ষোভের প্রধান কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে বিভিন্ন নেতাকর্মী এবং একটিভিস্টদের বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালিয়েছে। তা উপেক্ষা করেই রবিবারের বিক্ষোভে রাজপথে নেমে এসেছেন হাজারো জনতা।
ফেসবুকে পোস্ট করা লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ দেশের উত্তরের শান অঞ্চলের লশিও শহরে টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক মন্দির নগর বাগানের একটি মিছিল ছত্রভঙ্গ করতেও পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তবে তারা রাবার বুলেট ব্যবহার করেছিল নাকি গোলাবারুদ তা নিশ্চিত করা যায়নি।
তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোন খবর মেলেনি। এছাড়া অর্ধ ডজনেরও বেশি শহরে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদিনই এসব শহরে জান্তাবিরোধী প্রতিবাদ-সমাবেশ চলছে।
রবিবারের প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় অংশ দেখা যায়, মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর হাতে নিহত মানুষদের সম্মানার্থে বিক্ষোভকারীরা দুই মিনিট নীরবতা পালন করেন সেখানে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চিসহ তার দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করার পর থেকে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৫০ জনেরও অধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
মিয়ানমারের দক্ষিণের শহর দাউইয়ে চলমান এক বিক্ষোভে প্রতিবাদী এক নেতা বলেন, "তারা পাখি ও মুরগি মারার মতো মানুষকে হত্যা করছে"।
"আমরা যদি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করি তবে আমরা কী করব? আমাদের অবশ্যই বিদ্রোহ করা উচিত"।
ইয়াঙ্গুনে কমপক্ষে আরও তিনটি স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা রাতভর বিভিন্ন স্থানে ধরপাকড় ও গোলাগুলি চালায়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত তিনজনকে। তবে তাদের গ্রেপ্তারের করার কারণ জানা যায়নি।
অং সান সু চির দল এনএলডি'র পক্ষে কাজ করেছেন এমন একজন আইনজীবীর সন্ধানও করছিল পুলিশ। কিন্তু তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। অভ্যুত্থানের পর বিলুপ্ত হওয়া সংসদের একজন সদস্য সিথু মং তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এটি জানান।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান পুলিশ এবং জান্তা সরকারের একজন মুখপাত্রের সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
শনিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি লোককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরামর্শক গ্রুপ অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স।
সংস্থাটি জানায়, 'গ্রেপ্তারকৃতদের ঘুষি মেরে, বুটের লাথি দিয়ে, পিটিয়ে, টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়"।
"নিরাপত্তা বাহিনী আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করে এবং বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। এছাড়া তারা গুলি চালায় ও মানুষের বাড়িঘর তছনছ করে।"
মিয়ানমারে চলমান আটক, হত্যা এবং সহিংসতার ঘটনা পশ্চিমে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং এশিয়ার বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশ এর নিন্দা করা অব্যাহত রেখেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ সামরিক জান্তার ওপর বিভিন্ন পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
যদিও চীনের সুর ভিন্ন। চীনের মতে, এ মুহূর্তে একমাত্র অগ্রাধিকার হওয়া উচিত স্থিতিশীলতা আনয়ন এবং অন্য রাষ্ট্রগুলোর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করাটাই শ্রেয়।
- সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান