বাংলাদেশে আসতে আলোচনায় গুগল, অ্যামাজন
টেক জায়ান্ট গুগল এবং মার্কিন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন বাংলাদেশের বাজারে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে ভাবছে।
তবে কোম্পানি দুটিই ভ্যাট নিবন্ধকরণ এবং অর্থ প্রদান সংক্রান্ত কিছুটা জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে। এসব সমস্যা নিরসনে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে যোগাযোগ করেছেন।
ই-ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন একটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠেছে তাদের জন্য। এই নিবন্ধনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে একটি স্থায়ী স্থানীয় ঠিকানা প্রয়োজন, যা কোম্পানি দুটোর নেই।
তার ওপর গুগল এবং অ্যামাজন ট্যাক্স প্রদানের জন্য ভ্যাট এজেন্টদের মধ্য দিয়ে যেতে চাচ্ছে না বরং বাংলাদেশে কার্যকর যে কোনও বৈশ্বিক ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ভ্যাট প্রদানে ইচ্ছুক তারা।
ভ্যাট সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য তারা 'বিগ ফোর' এর মত একটি শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী বৈশ্বিক সংস্থার হস্তক্ষেপ চায়।
বাছাইকৃত সে মধ্যস্থতাকারী সংস্থাটি যাকে বাছাই করা হবে, ভ্যাট সংক্রান্ত বিধি / নির্দেশিকাগুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি গুগল এবং অ্যামাজনের জন্য সমস্ত কাগজপত্রও তাকেই প্রস্তুত করতে হবে।
গুগল বা অ্যামাজনের জন্য আরেকটি বড় সমস্যা হলো ডাবল ট্যাক্সেশন বা দ্বিগুণ করারোপের ঝুঁকি। বাংলাদেশের কোনও ক্রেতা/গ্রাহক যখন অ্যামাজন বা অনুরূপ কোন প্ল্যাটফর্মের কাছ থেকে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তখন ব্যাংকগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্ডের লেনদেন থেকে ভ্যাট সরিয়ে নেয়। তবে অ্যামাজনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। পরবর্তীতে অ্যামাজন এবং একই ধরনের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ওপর যখন ভ্যাট প্রদানের শর্ত আরোপ করা হবে, সেক্ষেত্রে দ্বিগুণ করারোপের ঘটনা ঘটবে।
ফলে গুগল এবং অ্যামাজন উভয়ই এই ধরণের স্বয়ংক্রিয় ভ্যাট কেটে নেওয়ার পদ্ধতির বিরোধী। তারা চায় বৈশ্বিক কোন সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশের কোনও মধ্যস্থতাকারী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্যাট কার্যক্রম পরিচালনা করতে।
"সরকার তাদের প্রস্তাবে কেমন সাড়া দেয় সেটিই এখন দেখবে গুগল এবং অ্যামাজন," বলেন একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
"তারা ব্যবসায় স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটিতে গুরুত্ব দিবে এবং আমাদের এখানকার আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেমন তা নিরীক্ষণ করে দেখবে।"
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের নিবন্ধন নেওয়ার জন্য দেশের একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে গুগল ও অ্যামাজন। সে প্রতিষ্ঠানটির কাছে দেশের বাজারের সম্ভাবনা, কর কাঠামো ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে তারা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গুগল ও অ্যামাজনের বাংলাদেশে আসা নিয়ে দুটি সম্ভাব্যতা হতে পারে। প্রথমত, তারা এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশে নিবন্ধন করে ব্যবসা করবে। দ্বিতীয়ত, অফিস স্থাপনের মাধ্যমে স্থায়ী ব্যবসায় নামা। তবে পুরো বিষয়টি এখনো স্টাডি লেভেলে রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'গুগল ও অ্যামাজন মূলত বাংলাদেশের রেগুলেটরি বিষয়গুলো জানার জন্য স্টাডি করছে। মোট কত ট্যাক্স হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপন করলে কি রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করতে হবে তা শুনছে।'
এনবিআরের সদস্য, মোঃ মাসুদ সাদিক বলেন, 'ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া সংক্রান্ত জটিলতাটি এরই মধ্যে কেটে গেছে। গত ডিসেম্বরের ১ তারিখ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের দেশে একজন এজেন্ট নিয়োগ করে তার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে পারবে।'
'এছাড়া পারমানেন্ট স্ট্যাবিলশডমেন্ট ছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন নেয়ার পদ্ধতি প্রণয়নে কাজ করছে এনবিআর,' যোগ করেন তিনি।
এজেন্টের মাধ্যমে নিবন্ধন নেয়ার পর ডাবল ট্যাক্সেশনের বিষয়ে সাদিক বলেন, 'বাংলাদেশে অফিস হলে তখন বিজ্ঞাপনদাতা বা অন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট চালান সংগ্রহ করে ফাইনাল স্টেজে তা সমন্বয় করতে পারবে। আর দেশে অফিস স্থাপন না করলেও তাদেরকে কিভাবে ডাবল ট্যাক্সেশনের দায়ভার থেকে মুক্ত করা যায় তা ভাবছে এনবিআর,'
"আমাদের যেকোনো একটি পদ্ধতি বের করতে হবে," বলেন তিনি।
আলোচ্য প্রধান এ দুই ইস্যু সমাধান হলেও খুব সহজে বাংলাদেশে গুগল-অ্যামাজন আসতে পারছে না বলে মনে করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলছেন, 'নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানের ৫ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার হলে তাদের জন্য সেলস ডাটা কন্ট্রোলার ব্যবহার ও রিটার্নে পারচেইজ হিসাব মেইনটেইন্স করা বাধ্যতামূলক। তবে ওই সব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করায় এবং দেশে তাদের কোনো পারচেইজ না থাকায় এ দুটি বিষয়ে জটিলতা তৈরি হবে,'
'ফলে এ দুটি বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধানের জন্য আবেদন করতে হবে তাদের। বিষয়গুলো আইনের সঙ্গ জড়িত হওয়ার কারণে সমাধান হতেও বেশ সময় লাগবে', যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।