লকডাউনে বিশ্বের ৮৪ শতাংশ দেশে বায়ুর গুণগত মান বৃদ্ধি: প্রতিবেদন
করোনাভাইরাস লকডাউনের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়ুতে গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে আবারও সরকারপ্রধানেরা লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছেন, সচল হচ্ছে অর্থনীতির চাকাও। ফলে এই মানের পরিবর্তন বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আইকিউ এয়ারের ২০২০ সালের ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটির প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালীন বিভিন্ন শিল্প কারখানা এবং যানবাহন থেকে কার্বন নির্গমন হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের ৬৫% শহর ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বায়ুর মানে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে। সামগ্রিকভাবে, ৮৪ শতাংশ রাষ্ট্রই বায়ুর গুণগত মান বৃদ্ধির অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটি জানায়, "কোভিড -১৯ এর সাথে বায়ু দূষণের মধ্যকার এ সংযোগ নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। বিভিন্ন এলাকার বায়ু লকডাউনকালীন সময়ে যেভাবে স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে, তাতে এটাই প্রমাণিত হয়, জরুরি প্রয়োজনে ও সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে বায়ুর গুণগত মানের উন্নতি সম্ভব"।
১০৬টি দেশের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে আইকিউ এয়ারের গবেষকেরা এসব পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, পরিবেশ আইন অনুযায়ী, বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা 'পিএম ২.৫'-এর মানমাত্রা হচ্ছে প্রতি কিউবিক মিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। বায়ুর মানমাত্রার এ সূচক ১০০-এর ওপরে উঠলেই তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ।
সিঙ্গাপুর, বেইজিং, এবং ব্যাংকক - এই দেশগুলো যেভাবে করোনাকালে লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করে এবং ব্যবসা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়, তার ফলে পিএম ২.৫ এর মানমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। কিন্তু সব দেশ আস্তে আস্তে লকডাউন উঠিয়ে দিচ্ছে, অর্থনীতির চাকাও সচল হচ্ছে। ফলে বাতাসের দূষণ আবার আগের রূপে ফিরে আসবে বলে প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত স্থানের তালিকা বছরের পর বছর ধরে দখল করে রেখেছে দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বিভিন্ন শহর। এসব স্থানের ৫০টির ভেতর ৪৯টিই বাংলাদেশ, চীন, ভারত এবং পাকিস্তানের!
চীনের পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং এ অবস্থিত হোতান শহরকে ২০২০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের আখ্যা দেয়া হয়েছিল। এর পিএম ২.৫ এর বার্ষিক গড় ছিল প্রতি কিউবিক মিটারে ১১০.২ মাইক্রোগ্রাম।
হোতানের পরে, দূষণের তালিকায় থাকা পরবর্তী ১৩টি স্থানই ভারতের। যানবাহনের ধোঁয়া, ক্রমবর্ধমাণ নির্মাণের কাজ এবং বর্জ্য পোড়ানো তো আছেই, দেশের উত্তর পাঞ্জাব ও হরিয়ানা প্রদেশে কৃষকেরা খড় পুড়িয়েও বায়ু দূষণে প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছেন ভারতে। পরেরবারের ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই নাকি আবাদী জমিতে আগুন লাগিয়ে দেন!
পশ্চিমা দেশগুলোতে এ ভূমিকা পালন করেছে ওয়াইল্ডফায়ারস বা দাবানল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়ার ভেতর ইন্দোনেশিয়াতে যে তীব্র দাবদাহের সৃষ্টি হয়েছে তা প্রচুর পরিমাণে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে বায়ু দূষণ বাড়িয়েছে।
২০১৯ সালের তুলনায় সাও পাওলো, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং মেলবোর্নের বায়ুতেও পিএম ২.৫-এর মাত্রা বেড়েছে বহুগুণ।
তবে আশার কথা এটাই যে, দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক দূষিত ২৫টি শহরে আগের চেয়ে পিএম ২.৫-এর মাত্রা কমেছে এবং গত চার বছরে সামগ্রিক বায়ু দূষণের সূচক নিম্নমুখী হয়েছে।
পূর্ব এশীয় দেশগুলোও বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নে প্রচেষ্টা রেখেছে; সাধারণত এ অঞ্চলের দেশগুলোর পিএম ২.৫ মান নিম্নমুখীই হয়ে থাকে।দক্ষিণ কোরিয়াতে, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কয়লার উৎপাদনে গৃহীত কিছু পদক্ষেপের দরুন ২০২০ সালে বায়ু মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়।
- সূত্র: সিএনএন