দ্বিগুণ স্টোর রেন্টের প্রভাব: স্বাভাবিক হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে জট কমাতে গত ৮ মার্চ থেকে এফসিএল (ফুল কন্টেইনার লোড) কন্টেইনারের উপর দ্বিগুণ স্টোররেন্ট আরোপ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে বন্দরে কমতে শুরু করেছে কন্টেইনার সংখ্যা। স্বাভাবিক হচ্ছে কন্টেইনার জট। দ্বিগুন স্টোর রেন্ট আরোপের ৮ দিনের মধ্যে কন্টেইনার কমেছে ৩,৬৫৮ টি।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, রজমান মাসকে কেন্দ্র করে আমদানি হওয়া ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে সুফলও মিলেছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আরো কমে আসবে কন্টেইনার সংখ্যা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন কন্টেইনার জট কমাতে জরিমানা নয়, অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করে এই সমস্যার সমাধান করা গেলে ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী বন্দরে কন্টেইনার নামার ১১ দিন পর থেকে স্বাভাবিক ভাড়ার দ্বিগুন জরিমানা বা স্টোর রেন্ট দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ৪ দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা সাইজের একটি কন্টেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ ইউএস ডলার ভাড়া গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন একই সাইজের কন্টেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের। সেই হিসেবে ২০ ফুট সাইজের একটি কন্টেইনারের ১১ দিন পর পরবর্তী ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ১২ ডলারের পরিবর্তে ২৪ ডলার এবং ২১ দিন পর ২৪ ডলারের পরিবর্তে ৪৮ ডলার জরিমানা দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ১৫ ভাগ খালি রাখতে হয়। সেটি করা না গেলে বন্দরের ভেতরে কন্টেইনার পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ী চলাচল ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। দুর্ঘটনার আশংকা তৈরী হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক বলেন, এফসিএল কন্টেইনারের ক্ষেত্রে ১১ দিন পর দ্বিগুণ জরিমানার বিধানটি এখনো অব্যাহত আছে। আমরা প্রত্যাশা করি ব্যবসায়ীরা নির্দেশনা অনুযায়ী বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি নেবেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের পোর্ট পারফরমেন্স এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ৩৪,৭১৬ টি। ১৪ মার্চ এই সংখ্যা ৩৩,১৩৬ টি। যখন দ্বিগুন জরিমানা কার্যকর করা হয় ৮ মার্চ বন্দরে কন্টেইনার ছিলো ৩৮,৩৭৪ টি। দ্বিগুন স্টোররেন্ট আরোপের ৮ দিনের মধ্যে কন্টেইনার কমেছে ৩৬৫৮ টি। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ধারনসংখ্যা ৪৯,০১৮ টি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ে। ব্যবসায়ীদের নিজস্ব গুদাম না থাকায় তারা বন্দরের ইয়ার্ডকেই ব্যবহার করেন। ফলে প্রতিবছর রমজান এলে একই ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বন্দরে কন্টেইনার জট শুরু হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ইয়ার্ডে যেখানে ৩১,৪৮৭ টি কন্টেইনার ছিলো, ২৩ ফেব্রুয়ারি ছিলো ৪১০৩১, টি। ৭ দিনের ব্যবধানে কন্টেইনার বাড়ে ৯,৫৪৪ টি।
এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এফসিএল কন্টেইনার দ্রুত ডেলিভারি নেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারী করে। দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি না নিলে বর্ধিত স্টোর রেন্ট আরোপের নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে। পরবর্তীতে একই ইস্যুতে ২৮ ফেব্রুয়ারি আরো একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ট্রাফিক এনামুল করিম স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বন্দর থেকে দৈনিক কন্টেইনার ডেলিভারির ক্ষেত্রে ধীরগতির কারণে বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম নিরবিচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে কমন ল্যান্ডিং তারিখ এর পর ১১ তম দিন হতে প্রযোজ্য স্ল্যাব এর স্বাভাবিক ভাড়ার উপর দুই গুন হারে স্টোর রেন্ট আরোপ করা হলো।
তবে ব্যবসায়ীদের পুনরায় সুযোগ দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে ৪ মার্চ আরেকটি নোটিশ জারী করে। ওই বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে ১ মার্চ এর পরিবর্তে ৮ মার্চ থেকে বন্দরে এফসিএল কন্টেইনারের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ জরিমানা কার্যকর আছে।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস এন্ড এসোসিয়েশনের প্রথম যুগ্ন সাধারণ সম্পদাক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, বন্দরে কন্টেইনার জট কমে আসলে দ্বিগুণ স্টোর রেন্ট প্রত্যাহার করা হবে আমাদের এমনটাই আশ্বাস দিয়েছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। যেহেতু কন্টেইনার সংখ্যা কমে এসেছে তাই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা উচিৎ।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, করোনার সংকট এখনো কাটেনি। এমনিতেই ব্যবসায়ীরা লোকসানের মধ্যে রয়েছে। এমন সময়ে দ্বিগুণ স্টোর রেন্ট আরোপের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্তটি দ্রুত পরিবর্তন করা গেলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। একইভাবে আমদানিকারকদেরও সঠিক সময়ে বন্দর থেকে পণ্য খালাস নিশ্চিত করতে হবে।