শাল্লায় হিন্দু বাড়িতে হামলা: ‘মাস্টারমাইন্ড’ গ্রেপ্তার
সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আলোচিত ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার দুপুরে পিবিআই'র সিলেট কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার এলাকা থেকে স্বাধীনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহীদুল ইসলাম স্বাধীন বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তাকে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে হন্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এই ঘটনায় পিবিআই শ্যাডো তদন্ত করছে এবং আসামি ধরতে পিবিআইয়ের অভিযান চলবে বলে জানান এসপি।
গত ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর থেকেই হামলাকারী হিসেবে ওঠে আসে স্বাধীনের নাম। হামলার পরদিন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়েরকৃত মামলায় স্বাধীনকে প্রধান আসামি করা হয়।
শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের বাড়ি শাল্লার পাশ্ববর্তী দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।
হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে এক যুবকের দেওয়া স্ট্যাটাসের জেরে ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। হাজারও লোক অস্ত্রশস্ত্রসহ মিছিল নিয়ে এসে এই হামলা চালায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলাকারীদের বেশিরভাগই আসে স্বাধীনের গ্রাম দিরাইয়ের নাচনি থেকে। স্বাধীন মেম্বারও হামলাকারীদের দলে ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই হামলা হয়।
স্বাধীন মেম্বারের সঙ্গে জলমহাল নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের জেরে মামুনুল অনুসারীদের সঙ্গে তিনি এই হামলায় অংশ নেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। বাড়িঘর ভাঙচুর হওয়া একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপেই স্বাধীন মেম্বারের নাম ওঠে আসে।
এদিকে, এই ঘটনায় শুক্রবার রাতভর অভিযান চালিয়ে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে শাল্লা থানা পুলিশ। শাল্লার তাণ্ডবের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ দিরাইয়ে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। পরদিন মামুনুলের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন নোয়াগাঁওয়ের এক যুবক। সেই স্ট্যাটাসের জেরে হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামে হামলা চালিয়ে ৮০টিরও বেশি বাড়ি ভাঙচুর ও সেগুলোতে লুটপাট চালানো হয়।
এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।