মার্কিন অতি-ধনীরা ‘প্রায় কোনও আয়করই দেয় না’
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২৫ ধনী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের তালিকায় আছে আমাজন প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেফ বেজোস থেকে শুরু করে টেসলার সিইও এলন মাস্ক এবং ব্লুমবার্গের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গের মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নাম। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তর ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস)-এর তথ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশ করেছে প্রোপাব্লিকা নামের একটি সংবাদ সংস্থা।
প্রোপাব্লিকার দাবি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এই নির্বাহীরা তাদের আয়ের খুব সামান্য অংশ কর হিসেবে প্রদান করে থাকেন। এমনকি, অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে পুরোপুরি কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ফোর্বসের তালিকা অনুসারে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এই শীর্ষ ধনীদের নিট সম্পদের পরিমাণ ৪০১ বিলিয়ন ডলারে পোঁছায়। প্রোপাব্লিকা জানিয়েছে এই সময়কালে শীর্ষ এই ধনীরা মাত্র ১৩.৬ বিলিয়ন ডলার আয়কর প্রদান করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর ব্যবস্থাপনার বৈষম্যের চিত্র প্রকাশ করছে এসব নথি। বেজোস, মাস্ক এবং ব্লুমবার্গ ছাড়াও ওয়ারেন বাফেট এবং জর্জ সরোস কর ব্যবস্থাপনার এই ফাঁক গলে বেরিয়ে এসেছেন।
২০০৭ সালে আমাজনের সিইও জেফ বেজোস কোনো আয়কর প্রদান করেননি। অথচ সে বছর তার প্রতিষ্ঠানের স্টক মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়। চার বছর পর বেজোসের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু, বেজোস লোকসানের তথ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে সন্তানদের জন্য চার হাজার ডলারের টেক্স ক্রেডিট বা কর ছাড় পান বলে জানায় প্রোপাব্লিকা।
এছাড়া, প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে অপর বিলিয়নিয়ার সরোস পর পর তিন বছর কোনো আয়কর প্রদান করেননি। সরোসের মুখপাত্র জানায়, "২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জর্জ সরোস বিনিয়োগকৃত অর্থ হারান। আর তাই সে বছরগুলোতে তিনি আয়কর প্রদান করেননি।"
অন্যদিকে, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহী ওয়ারেন বাফেট দীর্ঘ সময় ধরে জনসম্মুখে ধনী ব্যক্তিদের ওপর কর ব্যবস্থা কঠোর করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাফেট নিজেই মাত্র ২৩.৭ মিলিয়ন ডলার আয়কর প্রদান করেছেন। এসময় তার সম্পদের মূল্য ছিল ২৪.৩ বিলিয়ন ডলার।
বৃহৎ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ ২০১৮ সালে ১.৯ বিলিয়ন ডলার আয় করলেও আয়কর হিসেবে মাত্র ৭০.৭ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেন। ব্লুমবার্গ জনহিতকর কাজে অনুদানসহ অন্যান্য বৈধ উপায়ে করের পরিমাণ কমাতে সক্ষম হন।
প্রতিবেদনটিতে কর ফাঁকি দেওয়ার বিভিন্ন কৌশলের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ঋণকৃত বিপুল অর্থের সুদের অর্থ কর মওকুফের অংশ হিসেবে ধরার মতো বিভিন্ন বৈধ নীতিমালা।
তবে, প্রোপাব্লিকা এই তথ্য কীভাবে পেলো সে বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি। প্রকাশনা সংস্থাটির দাবি, তাদের হাতে অবিন্যস্ত অবস্থাতেই এসব নথি এসে পৌঁছেছে। এছাড়া, যেসব নির্বাহীদের তথ্য সামনে এসেছে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের সকলকেই প্রকাশনার পূর্বে এসব তথ্য সম্পর্কে অবগত করেছে বলেও প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
"যাদের প্রসঙ্গ সামনে এসেছে তাদের সবার কাছেই মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল," বলেছে প্রোপাব্লিকা। সংস্থাটি জানায়, "সকলেই বলেছেন যে, তাদের ওপর যা আরোপিত হয়েছে সেই পরিমাণ করই তারা পরিশোধ করেছেন।"
যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্পদের ওপর আরোপিত করের তুলনায় আয়করের ওপর অধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর তাই, ধনী ব্যক্তিরা ইতোমধ্যে যেসব সম্পদের মালিক হয়ে বসে আছেন তার ওপর আয়কর প্রযোজ্য হয় না। যেমন, কারও যদি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, বিলাসবহুল বাংলো বা ইয়ট থাকে, তাহলে এই সম্পদগুলো বিক্রি না করা পর্যন্ত বা তা থেকে কোনো আয় সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আয়কর প্রযোজ্য হবে না। এর বাইরেও কর ব্যবস্থায় বেশ কিছু ফাঁক রয়েছে যার মাধ্যমে কর সীমিত করা বা পুরোপুরি ফাঁকি দেওয়া সম্ভব।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মূল দুঃচিন্তা এখন গোপন তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে। মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে আয়করের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি। বিষয়টি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
"আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি," বলেন সাকি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে ধনী এবং বৃহৎ করপোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন তখনই সামনে এলো এই তথ্য। প্রকাশিত এই নথি সম্পদের ওপর আরোপিত কর নিয়ে বাইডেন প্রশাসনকে নতুন করে ভাবার সুযোগ দিচ্ছে।
আইনের সাহায্যে তথ্য ফাঁসে জড়িত ব্যক্তি বা সরকারি সত্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রোপাব্লিকার কাছে দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছেন মাইকেল ব্লুমবার্গের মুখপাত্র।
এছাড়া, কর সম্পর্কিত নথি কীভাবে ফাঁস হলো তা অনুসন্ধানে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ।
- নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে