করোনা উপসর্গে মৃত্যু বাড়ছে
জুলাই মাসে একদিনও দৈনিক মৃত্যু একশোর নিচে নামেনি। তবে কোভিড পজিটিভ হয়ে মৃত্যুর পাশাপাশি দেশে জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়েও মৃত্যু অনেক বেড়েছে।
কোভিড টেস্টে অনীহা, দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণে প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
তবে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু সরকারি তালিকায় যুক্ত না হওয়ায় তারা কোভিড মৃত্যু তালিকার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। গ্রামের রোগীদের মধ্যে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর হার বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কোভিড পজিটিভ হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যান ১৫ জন।
গত চারদিনে (১৯-২৩ জুলাই) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ জন করোনা পজিটিভ, ৬০ জন করোনার উপসর্গে এবং একজন পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হয়ে মারা যান। অর্থাৎ, হাসপাতালটিতে করোনায় মৃত্যুর চেয়ে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু অনেক বেশি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. শামীম ইয়াজদানী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের হাসপাতালের অধিকাংশ রোগী গ্রাম থেকে আসেন। তারা শুরুতে টেস্ট করান না এবং করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১০ থেকে ১২ দিন পর যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তখন হাসপাতালে আসেন।"
"পরবর্তীতে তাদের আরটিপিসিআর টেস্টে কোভিড নেগেটিভ পাওয়া যায়। কিন্তু কোভিড টেস্টে নেগেটিভ আসলেও তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম থাকে। আলাদা ওয়ার্ডে রেখে তাদের অক্সিজেন দিয়ে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। কোভিড নেগেটিভ আসার সেসব রোগী মারা যান, তাদের সাসপেক্টেট বলা হয়, কোভিডের প্রতিদিনের সরকারি মৃত্যুর তালিকায় তাদের নাম যুক্ত হয় না," বলেন তিনি
ড. শামীম ইয়াজদানী আরও বলেন, "সন্দেহভাজন রোগীরা অক্সিজেন স্যাচুরেশন একেবারে কমে যাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে যখন হাসপাতালে আসে্ন, তখন আর কিছুই করার থাকেনা।"
"আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২ জন সন্দেহভাজন রোগী আসেন, যারা অনেক আগে থেকে জ্বরে ভুগছেন। এছাড়া, প্রতিদিনই দুই তিনজন এমন রোগী আসেন, যারা হাসপাতালে ভর্তির পর ট্রিটমেন্ট শুরুর আগেই মারা যান। পরীক্ষা করে আগে থেকেই আইসোলেশনে গেলে ওই রোগীরা নিজেরাও বাঁচতেন, পাশাপাশি সংক্রমণও ছড়াতেন না। তাই গ্রামের রোগীদের করোনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে।"
শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ নয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার উপসর্গ নিয়ে কুষ্টিয়ায় ছয়জন, ময়মনসিংহে ১১ জন ও বরিশাল বিভাগে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর তথ্য জানানো হলেও সেখানে থাকে না উপসর্গ নিয়ে মৃত রোগীর তথ্য।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় করোনার উপসর্গে মৃত্যু নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও)।
বিপিও প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৩ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দুই সপ্তাহে সারা দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৪৮৬ জন। এর আগের সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিলো ১৫১ জন।
আগে রাজশাহী ও খুলনায় মৃতের সংখ্যা বেশি থাকলেও পরবর্তীতে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে মৃতের সংখ্যা উল্লেখজনক হারে বৃদ্ধি পায়।
বিপিওর তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত বছরের মার্চে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৯৩৯ জনের। এর মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৪৫০ জন ও নারী ৪৮৯ জন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বেশি।
প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. রাজীব দে সরকার।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "দুপুর দুইটার পর ঢাকা শহরের সরকারি ল্যাবগুলোতে কোভিড টেস্ট বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী আসে বেশি। দুপুর দুইটার মধ্যে কোভিড টেস্ট করতে না পারলে ওই রোগীকে আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হয়, পরদিন টেস্ট করলেও রিপোর্ট পেতে অন্তত সাত আট ঘণ্টা সময় লাগে। তাই রোগীর রেমডিসিভির বা কোভিডের অন্য ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু হতে অনেক সময় লাগে। ততোক্ষণে রোগীরা মারা যান। এছাড়া, একেবারে শেষ সময় হাসপাতালে আসার কারণেও সন্দেহভাজন রোগীদের মৃত্যু অনেক বেশি।"
তিনি আরও বলেন, "সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২ জন সন্দেহভাজন কোভিড রোগী মারা যান। কিন্তু কোভিড পজিটিভ মৃত্যু তার চেয়ে অনেক কম থাকে। ঢাকার বাইরের রোগীদের মধ্যে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বেশি। এছাড়া, ঢাকার বিহারি ক্যাম্প ও বস্তিবাসী রোগীদের মধ্যেও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর হার বেশি।"
১৭ দিনের মধ্যে ২৪ ঘন্টায় সর্বনিম্ন ১৬৬ জনের মৃত্যু
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ১৭ দিনের মধ্যে আজ মৃত্যুর সংখ্যা সর্বনিম্ন।
গত ৬ জুলাই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দেশে ১৬৩ জন মারা যান।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয় হাজার ৩৬৪ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রানুসারে, এ নিয়ে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে মোট ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।