৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে নামছেন জেলেরা
নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ শিকারে যাত্রা শুরু করেছে জেলেরা। ৬৫ দিন বন্ধ থাকার পর ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে মাছ শিকার। দীর্ঘদিন সাগরে মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকার এবার ভালো সুফল মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলেরা।
গতকাল সরেজমিনে কর্ণফুলী তীরের বিভিন্ন ঘাটে জাল প্রস্তুতের পাশাপাশি ফিশিং ট্রলার মেরামত করতে দেখা গেছে জেলেদের। মাছ ধরার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, উপকরণ এবং খাদ্য সামগ্রী ট্রলারে তুলছেন কেউ কেউ।
কর্ণফুলী তীরে ফিশারি ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি ফিশিং ট্রলার ঘাটে নোঙ্গর দেওয়া। জেলেরা ওইসব ফিশিং ট্রলারে জাল তুলছেন। কেউবা জাল বুনছেন। শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। ট্রলার প্রস্তুতে ব্যস্ততায় কাটছে তাদের সময়।
বাঁশখালী এলাকার জেলে রহমত মাঝি বলেন, 'গত দুই মাস সাগরে মাছ শিকার বন্ধ ছিল, আমরা কেউ মাছ শিকারে যাইনি। ধারদেনা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ তাই সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের ফিশিং ট্রলারে ২০ জন জেলে রয়েছে। সবাই মাছ শিকারে যেতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি'।
অপর জেলে চন্দন দাশ বলেন, '২০ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। যখন মাছ ধরা বন্ধ থাকে সেই নিয়মটি আমরা মেনে চলি। এবারও মেনে চলেছি। এতে আমাদের অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। আশা করি কাঙ্খিত পরিমাণ মাছ পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো'।
একই কথা জানালেন বিপুল দাশ, রাজিব মাঝি ও শীতল দাশসহ অন্যরা। তারা জানান, 'বেকার সময় কাটানোর পর এখন আমরা সাগরে যাবো। ঘাটগুলোও জমে উঠবে'। অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তা কাটিয়ে তারা ঘুরে দাঁড়াবেন বলে আশাবাদী।
সামুদ্রিক মৎস অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মঞ্জুর আলম বলেন, 'সাগরে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সকল প্রজাতির মাছ ধরার ওপর গত ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অবশেষে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ। এখন আর জেলেদের মাছ শিকারে যেতে বাঁধা নেই। নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের চাল দেওয়া হয়েছিল'।
এর আগে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন অর্থাৎ ৮ মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এতে বছরে অন্তত দশ মাস মাছ শিকার বন্ধ থাকায় সাগরে মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। শুধু ইলিশই নয়, সব ধরনের মাছই বড় হয়েছে। যার সুফল মিলবে দেশের মৎস্য খাতে।
সংশ্লিষ্ট জেলেরা জানান, এবার পদ্মা ও মেঘনায় বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ার আশা করছেন তারা। দীর্ঘদিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় মেঘনা ও পদ্মার অভয়ারণ্যে মাছ বেশ বড় হয়েছে। সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকলেও দেশের নদীগুলোতে মাছ শিকার অব্যাহত ছিল।
সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সরকারিভাবে সারাদেশে নিবন্ধিত ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৫ জন জেলে ও জেলে শ্রমিক রয়েছে। বাণিজ্যিক ট্রলার রয়েছে ৩০টি। যান্ত্রিক মৎস নৌযান রয়েছে ৩২ হাজার। অযান্ত্রিক নৌযান প্রায় ৩৪ হাজার।
২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল মাত্র ২ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ইলিশ শিকার করা হয় ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। অর্থাৎ গত ১১ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। দেশে বছর তিনেক আগেও বিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইলিশ ধরা পড়তো বাংলাদেশে। গত বছর থেকে তা ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
সামুদ্রিক মৎস অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সুমন বড়ুয়া বলেন, 'বিগত বছরগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে আমরা এ বছর প্রায় ৬ লাখ টন ইলিশ আহরণ করা যাবে বলে আশা করছি। ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫ থেকে ১৩০টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ইলিশের অভয়াশ্রম রয়েছে'।