হ্যাক হয়নি ‘সুরক্ষা’, চমেক হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয় ভুয়া এসএমএস: পুলিশ
চট্টগ্রামে করোনার ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধনের ওয়েবসাইট 'সুরক্ষা' হ্যাক করে সার্ভারে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, 'সুরক্ষা' সুরক্ষিতই আছে। অভিযোগ দায়েরকারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকেই হচ্ছে 'ভুয়া এসএমএস' পাঠানোর কারসাজি।
মঙ্গলবার চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রামে করোনার ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধনের ওয়েবসাইট 'সুরক্ষা' হ্যাক করে সার্ভারে প্রবেশের অভিযোগ এনে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চমেক হাসপাতালের ভ্যাকসিন কেন্দ্রে প্রতিদিন ৫-১০ জন অতিরিক্ত লোক ভ্যাকসিন নিতে আসছেন। এদের মোবাইলে এসএমএস গেছে; কিন্তু সেই তারিখের সঙ্গে সুরক্ষা অ্যাপের তারিখের মিল নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নজরে আসায় তাদের সন্দেহ হয়, সাইটটি কেউ হ্যাক করে সার্ভারে ঢুকে অবৈধভাবে তারিখগুলো পাঠাচ্ছেন।
বুধবার দুপুরে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "অভিযোগ পেয়েই আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তের এক পর্যায়ে বুঝতে পারি হ্যাক কান্ডের ভূত সর্ষের ভেতরেই আছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ভ্যাকসিন কেন্দ্র থেকে দশজন অপারেটর ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের কাছে টিকার তারিখ নিশ্চিত করে এসএমএস পাঠান। এই দশজন অপারেটরের আইডি ও পাসওয়ার্ড একই। মূলত এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভ্যাকসিন কেন্দ্রের অপারেটরদের কেউ বা কারা অতিরিক্ত ব্যক্তিদের কাছে অতিরিক্ত এসএমএসগুলো পাঠাচ্ছেন।"
"আমরা ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাব উদ্দিনসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। জানার চেষ্টা করছি কোন অপারেটর এই কাজটি করেছেন, কেন করেছেন ? কিংবা এর বিনিময়ে ওই অপারেটর অনৈতিক কোনো সুবিধা নিয়েছেন কিনা তাও তদন্ত করছি," বলেন ওসি জাহিদুল কবীর।
তবে এ বিষয়ে জানতে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাব উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, "বিষয়টিকে আমার বড় কোনো সমস্যা মনে হয়নি। সরকার ইতোমধ্যেই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমার মনে হয় না এ জন্য অ্যাপ হ্যাক করার প্রয়োজন রয়েছে।"
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ভ্যাকসিন কেন্দ্র থেকে পাঠানো ভুয়া এসএমএসের জেরে টিকা পেতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন নগরের কয়েকশ টিকা গ্রহীতা।
তেমনি একজন ভুক্তভোগী টিকাগ্রহীতা মাহবুবুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমি গত ৮ জুলাই সুরক্ষা অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করি। ২৬ জুলাই আমার মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। যেখানে জানানো হয় ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিতে যেতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত দিনে টিকা নিতে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা আমিসহ ২৬ জনকে টিকা না দিয়ে উল্টো হাসপাতালের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে ও মামলাসহ বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে।"
"তাদের অভিযোগ আমরা 'সুরক্ষা' ওয়েবসাইট হ্যাক করে এই এসএমএস পেয়েছি। অথচ অ্যাপস থেকে পাঠানো ওটিপি ব্যবহার করে আমি আমার টিকা কার্ডটিও সংগ্রহ করেছিলাম। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণে নিজেই লজ্জাবোধ করছি, সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। এছাড়া এ জটিলতায় আমাদের টিকা পাওয়া নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে," বলেন মাহবুবুল আলম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, "কোনো ব্যক্তিকেই টিকা পেতে সমস্যায় পড়তে হবেনা। পূর্ব নির্ধারিত দিনে টিকা কার্ড ও এসএমএস সঙ্গে নিয়ে গেলে কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাদের টিকা দিতে বাধ্য থাকবেন।"