'সামগ্ৰিক দিক বিবেচনা করতে হবে, সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে অর্থনীতিকে যেন সংকটে না ফেলি'
মৃত্যু ও সংক্রমণের হার একই ধারায় চলছে, কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরইমধ্যে কোরবানির ঈদ উত্তর বাংলাদেশে আর এক নতুন সংকট সৃষ্টি হলো। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত এমনি একটি পরিস্থিতির জন্য তারা কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলেন না। আমাদের মতোন দেশের সক্ষমতার প্রশ্নে চতুর্দিকেই শুধু সমস্যা বিদ্যমান।
কোভিড-১৯ এর মতো মারাত্মক ভাইরাস গত প্রায় দেড় বছর যাবৎ দেশের সমস্ত কিছু আটকে দিয়েছে। এই ভাইরাসের জন্য আজকের পৃথিবীর কোন অভিজ্ঞতা নেই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মতো নেই বাংলাদেশেরও। প্রথমে এক ধরনের নতুন ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। তা ছিল খানিকটা অতীতকালের কারফিউ এর মতো অর্থাৎ ঘর থেকে বাইরে বেরোনো যাবে না। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এই ব্যবস্থা চলতে থাকে একটানা প্রায় ৩০-৩৫ দিন। দেশের সকল কল-কারখান বন্ধ রাখা হয়েছিল। আর্থিক প্রতিষ্ঠান চলছিল খুবই সীমিত পরিসরে। পৃথিবীর নানা প্রান্তের অভিজ্ঞতা আহরণের মধ্যে থেকে বাধ্য হয়ে পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে কল কারখানা চালু করা শুরু করা হয়। বাংলাদেশের গত মার্চ মাসে যখন এই কোভিড পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তখন বাংলাদেশকে যে শ্রমশক্তি বাঁচিয়ে রাখে সেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা এক মহা সংকটে পড়েছিল। কারখানাগুলো বন্ধ থাকার ফলে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল। সেই পর্যায়ে সরকার সকল কারখানাগুলোকে তৈরি পোশাক ও তৈরি পোশাকের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ এর কারখানাগুলোকে নগদ অর্থ সাহায্য করেন। সীমিত সুদে এই টাকা ওই কারখানাগুলোকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত দিতে হবে।
গত বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের কর্মরত শ্রমিকরা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে শুরু করে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়। বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। এপ্রিল, মে এবং জুন বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে তারা উৎপাদিত তৈরি পোশাক মূলত শীতকালীন পোশাকের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে এবং জুন- জুলাই এর মধ্যেই পোশাকগুলো নির্দিষ্ট দেশে পাঠাতে হয়। এমনি একটি বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় দু'মাস পরে দেশের অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হয়।
তখনও করোনায় মৃত্যুর হার কমেনি। আক্রান্তের হার আস্তে আস্তে কমে মৃত্যু হার কিছুটা কমতে থাকে। বাংলাদেশে অর্থনীতির চাকা সচল হতে থাকে। কিন্তু সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের দ্বারা পরিচালিত সেগুলো বন্ধ রাখা হয়। এভাবেই চলতে থাকে দেশ। বছর শেষে নতুন বছর আসে। দেখা যায়, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আগমনের হার বাড়তে থাকে। দেশের অর্থনীতির উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই ধারা স্থায়ী হয় না। বোঝা যাচ্ছিল, ফেরত আসা শ্রমিকের সংখ্যা দেখে।
অন্যদিকে। ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমাদের তৈরি পোশাক খাত ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগানদাতা প্রধানত আমাদের তৈরি পোশাক খাত। আমাদের এই তৈরি পোশাক খাতের থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় আমাদের দেশের আমদানি নির্ভর অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। দেশে ১০০ কোটি ডলারের উপরে আমদানি পণ্য। প্রথম ১০ এর মধ্যে আছে তুলা, গম, সয়াবিন, পুরাতন লোহা ইত্যাদি। আমাদের দেশের আমদানি ব্যয়ের পুরোটাই মেটানো হয় তৈরি পোশাক থেকে আহরিত আয় ও বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানোর বৈদেশিক মুদ্রা থেকে।
গত এক বছর যাবত আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। রিজার্ভ প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। খারাপ খবর হলো, জুলাই মাসেই বৈদেশিক মুদ্রা আগমন প্রায় ২৬ শতাংশ কমে গেছে। আমাদের তৈরি পোশাক খাত ইতিমধ্যে ভিয়েতনামের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েছে। চীন, ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশের অবস্থান। এমনি পরিস্থিতিতে মার্চ থেকে আমরা কোভিডের নতুন আক্রমণের শিকার হতে হলো। কোভিড-১৯ আমরা আতঙ্কিত এবং পর্যদুস্ত হয়ে পড়লাম। সরকার ইতোমধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। ভারত থেকে টিকা ক্রয় করা এবং এক পর্যায়ে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন অযোগ্যতা ও ব্যর্থতা বেরিয়ে আসতে লাগলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশ বর্ণনা আর প্রকৃত অবস্থা ভিন্ন। মার্চ থেকে ক্রমান্বয়ে যখন নতুনভাবে সংক্রমণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পেতে জুন এবং জুলাইতে চূড়ান্ত বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করলো। এই পর্যায়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক এর উপরে মৃত্যু এবং ব্যাপক সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়া। বিতর্ক সৃষ্টি হলো, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ জনগণের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব একটি হচ্ছে আমাদের ঈদ উল-ফিতর অন্যটি হচ্ছে ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহার সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির সম্পর্ক আছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর পশুপালনের কাজে লিপ্ত হয়। এনজিওগুলো তাদেরকে নানাভাবে পশু পালনে উৎসাহিত করে। পশু ক্রয় এবং লালন পালনের জন্য সারাদেশে ব্যাপক হারে ঋণ প্রদান করা হয়। গ্রামীণ পশু লালন পালনকারী নারী, বিধবা এবং খুবই হতদরিদ্র মানুষগুলো এই কোরবানির পশু পালন করে। কোরবানির আগে পশু বিক্রি করে যৎসামান্য মুনাফা অর্জন করে এবং ঋণের টাকা পরিশোধ করে।
এমনই সময়ে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয়। দেশের মৃত্যুর হার ও সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। প্রতিদিন সরকার নানাভাবে বিভ্রান্তিতে পড়তে থাকে। কী করা উচিত কী করা উচিত না এমনি এক অবস্থায় দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পোশাক শিল্প তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়। গত বছরে একবার জুন-জুলাইয়ের দিকে চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাপকহারে তাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। তেমনি ধারা আবার এবছর সৃষ্টি হয়। কিভাবে রপ্তানি ঠিক রাখা যাবে তা নিয়ে সরকার এবং কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বিকেএমইএ এটিএম ইত্যাদি নানান প্রতিষ্ঠান তাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু করে। সরকার এক পর্যায়ে ঈদের পূর্বেই কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয়।
কারখানাসমূহ বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। একদিকে কোভিডের মারাত্মক পরিস্থিতি অন্যদিকে অর্থনীতির ব্যাপক বাস্তবতা এ দুয়ের মধ্যে আমাদের সীমিত সক্ষম রাষ্ট্র যে অল্প কিছু সময় পূর্বে দারিদ্র্যসীমাকে ছাড়িয়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে সেই দেশটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যে কতো কঠিন তা যারা দেশের সামগ্রিকতার ব্যাপারে একটু তথ্য ধারণ করেন তারা অনুধাবন করতে পারবেন।
সরকার যখন ঈদের আগেই অর্থাৎ গত ২২ তারিখ থেকে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন তখন বিজিএমইএ বিটিএমএ বিকেএমইএ এফবিসিসিআই সকলেই সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, এমন এক সময়ে যদি গার্মেন্টস শিল্পকে বন্ধ করে দেওয়া হয় কিংবা তার ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের এই মৌসুমের রপ্তানি মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে। দেশ এক তীব্র সংকটের মুখোমুখি হবে। সরকারের সঙ্গে নানা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকারের প্রস্তাবিত কমপ্লিট লকডাউন মেনে নিতে বাধ্য হয় টেক্সটাইল সম্পর্কিত সব সংগঠনগুলো।
বিকেএমইএ বিজিএমইএ বিটিএমএ টেক্সটাইলের এই তিনটি সংগঠনই সরকারের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে কারখানাসমূহ বন্ধ করে। তবে, কারখানাসমূহ বন্ধের সময় শ্রমিকদেরকে অবহিত করা হয়েছিল, তারা যেন এ বছর তাদের ঈদুল আযহা উদযাপন করতে তাদের স্থান থেকে গ্রামে প্রত্যাবর্তন না করে কারণ পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তন দেখা গেলেই কারখানাগুলোকে তাদের রপ্তানি আদেশ পূর্ণ করার জন্য খুলে দেওয়া হবে। এমনি একটি আলোচনার ভিত্তিতে সরকার ২২ জুলাই থেকে কারখানাসমূহকে সম্পূর্ণভাবে লকডাউন এর আওতায় নিয়ে যায় এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারি বিভিন্ন সংগঠন ও তেমনিভাবে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে শ্রমিকদেরকে জানানো হয়, তারা যেন তাদের কর্মস্থলে অবস্থান করেন। এখান থেকে যেন তারা গ্রামে না যান। এমনি তীব্র সংকটময় পরিস্থিতিতে পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়া সত্ত্বেও সরকার উপলব্ধি করেন, দেশের গার্মেন্ট শিল্পের এই সংকটকে যদি সরকার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আগামী দিনগুলো বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ চিত্র ধারণ করবে।
দেশে ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার আগমন ২৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত জুলাই মাসে তার আগের দেখা গেছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস অর্থাৎ তৈরি পোশাক রপ্তানি ও প্রায় ২ শতাংশ কমে গেছে। সেই কারণে বাধ্য হয়ে সংগঠনের নেতারা শিল্প-কারখানার সংগঠনের নেতারা বাধ্য হয়ে কারখানাগুলোকে স্বাস্থ্যবিধির আওতায় রেখে চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত রবিবার দেশের সকল রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা গুলো খুলে দেওয়া হয়। যেদিন প্রথম রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা গুলো খুলে দেওয়া হয় সেদিনই দেখা যায় দেশের গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল। বিরোধিতা করছেন, নানা কথা বলছেন কারণ গ্রাম থেকে মানুষরা যারা শহরে অঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকাতে ফিরে আসছেন তাদের যাত্রাপথ ছিল অত্যন্ত কঠিন। দুঃসাধ্য এক যাত্রা।
কারণ সরকার কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিলেও গণপরিবহন খুলতে রাজি হননি। গণপরিবহন খুলে দিলে সকল স্তরের মানুষ যারা গ্রামে চলে গিয়েছিল তারা শহরে ফিরে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কারণ আমাদের দেশের অর্থনীতি ঢাকা কেন্দ্রিকতায় রূপান্তরিত হয়েছে। আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিক, গার্মেন্টস কারখানাগুলো ঢাকা বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে এই ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকরা এ দুটি বিভাগে কর্মরত। এর সঙ্গে আমাদের টেক্সটাইল সুতাকল এবং ডাইং ফ্যাক্টরগুলোর কর্মরত শ্রমিকরা মূলত এই দুটি বিভাগের মধ্যেই সীমিত। এমনি একটি শহর কেন্দ্রিক অর্থনীতির দেশ। যেদিন খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো সেদিন ছিল ঈদের একদিন পর। সেই একদিন পরে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে দেখা গেল, হাজার হাজার মানুষ নৌপথে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে শহরে ফেরত আসছে।
এই বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে টকশোতে সরকারের। নানান সমালোচনা শুরু হলো। এই সমালোচনায় দুটো বিষয়ে নজর দিতে ব্যর্থ হলেন। প্রথমটি হচ্ছে, সরকার এবং শিল্প মালিকরা শ্রমিকদেরকে অবহিত করেছিল, এবার এই ঈদুল আযহার উৎসবে যেন তারা গ্রামের বাড়ি না যায়। কারণ, একটু অনুকূল পরিস্থিতি হলেই কারখানাগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কারখানা খোলার সময় গণপরিবহন চালু করা হবে না। সে কারণে কেউ যদি কোনভাবে গ্রামাঞ্চলে ফেরত যায় তাদের পক্ষে ফেরত আসা কঠিন হবে। মজার ব্যাপার হলো, যাদেরকে কেন্দ্র করে এই লকডাউন শিথিল করে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সেই তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে প্রথম দিন থেকেই উপস্থিতির হার সন্তোষজনক। এতে প্রমাণ হলো, আমাদের তৈরি পোশাক শ্রমিকরা অত্যন্ত দায়িত্ববান তারা নিজ দায়িত্বেই কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল এবং ধারণা করা হয় যে, তাদের অধিকাংশই গত ঈদুল আযহায় কারখানার আশেপাশে অবস্থান নিয়ে তাদের নিজ বাসস্থানে থেকে গেছে।
অন্যদিকে কারখানা খোলার ঘোষণার দিন থেকে যে চিত্র ফুটে উঠল গণপরিবহণের অভাবে তা থেকে কিন্তু একথা বলা যায় না এরা সবাই গার্মেন্টস শ্রমিক ছিল। নানা ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সকলেই ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।
গত বছরের পরিস্থিতির জন্য আমাদের আমদানিকৃতপ্রধান পণ্যগুলোর আন্তর্জাতিক বাজার দর ঊর্ধ্বগতি। তুলা, কাঁচা লোহা, জ্বালানি, সয়াবিন, গম প্রতিটি পণ্যের মূল্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে সরকারকে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে দেশের আমদানি ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। এ ক্ষেত্রে হয়তো রিজার্ভ ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ আমদানি-রপ্তানি বৈদেশিক রেমিটেন্স এর ব্যালেন্স হয়তো নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনাই সামনে বেশি। আমদানি ব্যয় যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে রপ্তানি আয় একদিকে কমে যাচ্ছে অন্যদিকে শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স নিম্নমুখী এমনি পরিস্থিতিতে আমাদের মতন একটি ছোট্ট সক্ষম দেশে কী বা করার ছিল।
তবে কথা বলা যেতে পারে যে সরকার আরেকটু সুচিন্তিতভাবে যেম্ কোরবানির গরু আনার জন্য গরুর ট্রেন দেওয়া হয়েছিল ঢাকা অভিমুখে, তেমনি সুনির্দিষ্ট গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য কোন বড় পরিবহনের ব্যবস্থা হয়তো করা যেতে পারত। গার্মেন্ট শ্রমিকরা বছরে যেহেতু এই দুটো ধর্মীয় উৎসবে গ্রামের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয় সুতরাং তাদেরকে আরেকটু কীভাবে স্বস্তি দেওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে পারতেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির কেন্দ্রিকতা হচ্ছে একমাত্র টেক্সটাইল। আর টেক্সটাইলের মূল কাঁচামাল সুতা আমরা প্রায় ১৫ লক্ষ টন অথবা ৭০ লক্ষ বেল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে। আবার আমাদের আমদানি রপ্তানির একটিমাত্র বন্দর কার্যকরভাবে পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর যা বর্তমানে প্রচন্ড পণ্য আটকা পড়েছে। এই মুহূর্তে প্রায় ১৫ দিন থেকে ২০ দিন আমদানি এবং রপ্তানি করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। সমস্ত দায়ভার আমদানি এবং রপ্তানিকারকদের উপর এসে পড়ছে। সুতরাং আমাদের দেশের সামগ্রিকতার জায়গা থেকে আমাদের সবকিছু লক্ষ্য করা দরকার। শুধুমাত্র সরকারকে আক্রমণ করার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে অর্থনীতিকে যেন এক তীব্র সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড় করানো না হয়।
- লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক