ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী গাড়ির এন্ট্রি ফি
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী একটি গাড়ি প্রবেশ করতে গেইটে এন্ট্রি ফি প্রদানে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার গাড়ি প্রবেশ করতে গিয়ে বন্দরের ৮টি গেইটে দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়।
বন্দর গেইট থেকে অপেক্ষমান গাড়ির সারি বিস্তৃত হয় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরগামী ভিআইপি সড়কেও। বন্দরের ইয়ার্ডে প্রবেশের অপেক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকায় সড়কে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা।
ব্যস্ততম এই সড়কে যানজটের কারণে বিমানবন্দর ও ইপিজেডগামী যাত্রীদের প্রতিনিয়ত পোহাতে হয় দুর্ভোগ। অনেকেই মিস করেন ফ্লাইট ।
এই সমস্যা নিরসনে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ির এন্ট্রি ফি পরিশোধ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন এই নিয়ম। ইতোমধ্যে গত ১১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ট্রায়াল রান।
এ লক্ষ্যে বন্দরের সকল গেইটে সার্ভিস ডেস্ক চালু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে একটি গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরের গেইটে আসার পর ইয়ার্ডে প্রবেশ করতে ১ থেকে ২ মিনিটের বেশি লাগবেনা।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত প্রায় ৫০ হাজার চালক এবং ২৭ হাজার চালকের সহযোগীর ছবি সহ তথ্য বন্দরের সফটওয়ারে ডাটা নিবন্ধিত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ৮টি গেইট দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশের সময় ৫৭ দশমিক ৫০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। ফি পরিশোধ সম্পন্ন করতে প্রতিটি গাড়ির সময় ব্যয় হয় ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এতে বন্দর গেইটে প্রবেশমুখী পরিবহনের দীর্ঘ জট লেগে যায়।
নতুন এই নিয়মের ফলে বন্দর গেইটে জট ও সময় কমার পাশাপাশি বন্দরের নি্রাপত্তা কর্মীদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রবণতা কমে আসবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের উপ পরিচালক (নিরাপত্তা/প্রশাসন) এস এম মাসুদুল ইসলাম বলেন, 'নতুন নিয়মেও এন্ট্রি ফি একই থাকছে। বন্দরের টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টস) ব্যবহার করে মোবাইল ফিনানসিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে এন্ট্রি ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট প্রদর্শন করে সরাসরি বন্দরের ইয়ার্ডে প্রবেশ করতে পারবে গাড়ি'।
তিনি বলেন, 'কাউন্টারে এন্ট্রি ফি পরিশোধ করতে সময় ক্ষেপণের কারণে বন্দর গেইটে জট লেগে যেতো। একজন চালক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বন্দর গেইটে আসার পরও কখন ভেতরে প্রবেশ করবে তার কোন নিশ্চয়তা ছিলোনা। গেইটে এলোমেলো পার্কিংয়ের কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। অনলাইনে এন্ট্রি ফি পরিশোধের ফলে বন্দরের সেবা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো'।
প্রতিদিন আমদানি পণ্য খালাস এবং ১৯টি বেসরকারি অফডক থেকে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের উদ্দেশ্যে বন্দরের ইয়ার্ডে প্রায় ৮ হাজার গাড়ি প্রবেশ করে। এসব গাড়ির প্রবেশ ফি বাবদ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা আদায় করে।
এই নির্ধারিত ফি'র বাইরে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা প্রতিটি গাড়ি থেকে গড়ে ১০০ টাকা হিসেবে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা আদায় করে গাড়ি চালকদের কাছ থেকে। অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও কোন সমাধান পাননি বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রাইম মুভার ট্রেইলর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক টিবিএসকে বলেন, 'প্রতিটি গাড়ি থেকে নির্ধারিত প্রবেশ ফি'র বাইরে ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করে বন্দরে গেইটে নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মীরা। বিষয়টি নিরাপত্তা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এনেও আমরা এতদিন সুফল পাইনি। আমরা জানিনা কারা এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। প্রবেশ ফি আদায়ে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি থাকবে নতুন এই নিয়ম বাস্তবায়নের সাথে বন্দরে প্রবেশে যাতে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করা হয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উপপরিচালক নিরাপত্তা/অপারেশন মেজর মো: ওয়াহিদুল হক টিবিএসকে বলেন, 'অনলাইনে এন্ট্রি ফি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে গাড়ি প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার সময় গেইটে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের আর কোন সুযোগ থাকবেনা'।
বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমদ টিবিএসকে বলেন, 'যেসব চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির সময়সীমা ৩ বছর অতিক্রম করেনি সেসব ড্রাইভারদের বন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। যেহেতু বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ সবকিছু দেখে একজন চালককে লাইসেন্স দেয় তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের উচিৎ এই সিদ্ধান্তটি বিবেচনা করা'।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু টিবিএসকে বলেন, 'এন্ট্রি ফি আদায়ের নতুন নিয়মকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তবে বন্দরের অন্যান্য ফি'র সাথে গাড়ির এন্ট্রি ফি আদায় করার জন্য বিকল্প প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি। এটি বাস্তবায়ন হলে এন্ট্রি ফি আদায় সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরো সহজতর হবে'।