তালেবান প্রশাসন: আগামী সপ্তাহে আসতে পারে নতুন সরকারের ঘোষণা
আগাম ঘোষণা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে সরকার গঠন করতে পারেনি তালেবান। তাদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ''নতুন সরকার গঠন এবং মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন, সেই ঘোষণা হবে আগামী সপ্তাহে।'' এদিকে, পানশির দখলে এসেছে বলে দাবি করে গতকাল কাবুলে শূন্যে গোলা ছুঁড়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন তালেবান যোদ্ধারা। সেই গুলিতে শিশুসহ অন্তত ১৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকালের পর আজও কাবুলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন নারীরা। প্রশাসনে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা, চাকরি-সহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকারের দাবি তোলা সেই মিছিলে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে তালেবান। রক্তাক্ত মুখ নিয়ে নার্গিস সাদ্দাত নামে এক সমাজকর্মী অভিযোগ করেছেন, তালেবান মেরে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।
রাজপথে নারীদের এই নিগ্রহের ঘটনায় তালেবানের 'সহনশীল' ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা আরও একবার ধাক্কা খেয়েছে। দোহা সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তালেবানের দেওয়া প্রতিশ্রুতিমাফিক তাদের সরকারে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারকে সম্মান করা, সন্ত্রাসবাদে মদদ না দেওয়া, প্রতিশোধ থেকে বিরত থাকার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলেই আমেরিকা-সহ আন্তর্জাতিক মহল আশা করে।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়ার কারণ জাবিউল্লাহ ব্যাখ্যা করেননি। তবে সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর আলোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির সদস্য খলিল হাক্কানি সেই বিলম্বের কারণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব রেখে বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকার গড়তে চাইছে তালেবান। সেই কারণেই দেরি হচ্ছে।
হাক্কানি বলেন, ''তালেবান নিজেদের মতো সরকার গড়ে নিতেই পারে। কিন্তু এমন একটা সরকার গড়ায় জোর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে সমস্ত দল, গোষ্ঠী, সমাজের সমস্ত স্তরের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তালেবান একা সারা বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।''
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি অর্থসাহায্যের পথ খোলা রাখার বড় দায় রয়েছে তালেবানের। সেই কারণেই একটি গ্রহণযোগ্য সরকার গঠনে বাড়তি সময় নিচ্ছে তারা।
টুইটারে হাক্কানি লিখেছেন, ''নিরাপত্তার বিষয়টি তালেবান খুব ভালই সামলাতে পারবে। কিন্তু একটি কার্যকর সরকার চালাতে গেলে তরুণ, শিক্ষিত আফগানদের মতামত ও সহযোগিতা দরকার। জোট সরকারের ব্যর্থতা যাতে আবার ফিরে না আসে, সেই কারণে তথাকথিত অচল রাজনীতিকদের সরিয়ে রাখতে হবে।'' তিনি আরও জানান, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার এবং সদ্য-সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির ভাই হাসমত গনি নতুন সরকারে জায়গা পাবেন। হাসমত ইতিমধ্যেই তালিবানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করেছেন।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। মানবিক চাহিদা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে আফগানিস্তানের সঙ্গে বিশ্বের যোগাযোগ আরও নিবিড় করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে ইমরান বলেছেন, ''এই সমস্ত পদক্ষেপ শুধু নিরাপত্তাকেই জোরদার করবে না, আফগানদের দলে দলে দেশ ছাড়া বন্ধ হবে। ফলে উদ্বাস্তু সমস্যাও ঘটবে না।''
তালেবানের এক কমান্ডার গতকাল রাতে দাবি করেন, পানশির তারা দখল করে ফেলেছেন। কিন্তু সেই ঘোষণার পরে উল্লসিত তালেবান যোদ্ধাদের ছোঁড়া গুলিতে কাবুলে ১৭ জন মারা যাওয়ায় কিছুটা অপ্রস্তুতেই পড়েছেন তালেবান নেতৃত্ব।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, গুলিতে আহতের সংখ্যা চল্লিশের বেশি। তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ টুইটারে লিখেছেন, ''কাবুল এবং সারা দেশের মুজাহিদদের বলছি, শূন্যে গুলি চালানো থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের হাতে অস্ত্র রয়েছে, কিন্তু তা নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। সাধারণ মানুষেরই গুলি লাগার সম্ভাবনা বেশি। কাজেই অকারণ গুলি চালাবেন না।''
পানশির প্রতিরোধ দলের নেতা আহমদ মাসউদ অবশ্য পানশিরের পতনের দাবি উড়িয়ে দিয়ে টুইট করেছেন, ''পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে এমন একটা মিথ্যে খবর ঘুরছে। পানশির দখল হয়ে গেলে সেটাই হবে এখানে আমার শেষ দিন।''
- সূত্র-আনন্দবাজার পত্রিকা