৫ দিনের মধ্যে সমাধান না পেলে আইনের পথে হাঁটবে ধামাকার ভুক্তভোগী মার্চেন্টরা
ধামাকা শপিং ডটকমের পণ্য সরবরাহকারী সাড়ে ৬০০ মার্চেন্টের পাওনা ২০০ কোটি টাকা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সমাধানের দাবি জানিয়েছে সেলার অ্যাসোসিয়েশন।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ধামাকা শপিংয়ে পণ্য সরবরাহকারী ভুক্তভোগী সেলার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠনের নেতারা এমন দাবি জানান।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "আমাদের পাওনাকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য পরিচালন কর্মকর্তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও মালিকপক্ষের কারো সাথে সাক্ষাৎ এবং সমাধান পাইনি। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দীন চিশতী বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে আমরা কোন সমাধান না পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিব।"
সংবাদ সম্মেনলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে তারা বলেন, ধামাকা শপিংয়ের সাড়ে ৬০০ মার্চেন্টের তিন লক্ষাধিক গ্রাহকের মানবিক দিক বিবেচনা করে ধামাকার 'ইনভ্যারিয়ান্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড' এর ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়াসহ ধামাকা শপিং সম্পর্কে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিশেষ অনুরোধ করছি।
অ্যাসোসিয়েশনের গণযোগাযোগ সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম জানান, গত বছরের ডিসেম্বর হতে ধামাকা শপিয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে আসছিলাম কয়েক শতাধিক মার্চেন্ট। চুক্তিতে স্পষ্ট লেখা ছিল পণ্য সরবরাহের অর্ডারের কপি (পিও) পাওয়ার পর ধামাকা শপিং মার্চেন্টের প্রকৃত টাকা ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করবে।
"কিন্তু ১৬০ দিবস অতিবাহিত হয়েছে আমরা প্রকৃত টাকা ফেরত পাচ্ছি না,"
তিনি বলেন, "এসএমই ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা আত্মীয়-স্বজন ও ব্যাংক হতে ঋণ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করে আজ রাস্তার ফকির হয়ে গিয়েছি। ধামাকা শপিং যেন পূর্বের ন্যায় কার্যক্রম চালু করে আমরা মার্চেন্টরা সর্বোচ্চ ধৈর্য সহকারে সহযোগিতা করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাধারণ ডায়েরিও করা হয়নি।"
'বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়ে দিয়েছে ধামাকা শপিংসহ দশটি ই-কমার্সের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। সিদ্ধান্তের ফলে ধামকা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে যা আমাদের জন্য আতঙ্ক ও ভয়ের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধামাকা শপিং এর কাছে গ্রাহকের প্রায় এক লাখের বেশি ডেলিভারি আটকে আছে। সেই গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি।
অধিক দামের পণ্য স্বল্পমূল্যে কিভাবে ডেলিভারি দিয়েছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সংগঠনের সভাপতি বলেন, আমাদের মার্চেন্ট এর সঙ্গে ধামাকার চুক্তি ছিল তারা প্রোডাক্টে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিবে তবে আমাদের যথাযথ মূল্য ফেরত দিবে। তবে অবিশ্বাস্য যে ছাড় তা কোথা থেকে পরিশোধ করবে তার যথাযথ উত্তর আমাদের কাছে নেই।
এর আগে ধামাকা শপিংয়ের বিষয়ে গত ৩০ জুন থেকে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্সের নামে বিভিন্ন পণ্যের লোভনীয় অফার ও ভার্চুয়াল সিগনেচার কার্ড বিক্রি করে অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে নামে সিআইডি।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের তথ্য পাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আল আমিন হোসেন বনানী থানায় অর্থপাচার আইনে মামলা করেছেন।
ই-কমার্সের নামে অস্বাভাবিক স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহের লোভ দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ১১৭ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।
এজন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমডি জসিম উদ্দিন চিশতিসহ তার স্ত্রী ও তিন সন্তান ও ধামাকা শপিংয়ের এক পরিচালক এবং চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিআইডি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবসমূহের জমা ও উত্তোলন স্লিপ এবং দেশের বাইরে সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
এজাহার সূত্রে জানায়, ধামাকা শপিং প্রায় ৫ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন লোভনীয় অফারে পণ্য দেওয়ার নামে ৮০৩.৫১ কোটি টাকা গ্রহণ করে। শুরুতে কিছু গ্রাহককে পণ্য দিলেও পরবর্তীতে আর কাউকেই পণ্য না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে ধামাকা শপিং।
শুধু তাই-ই নয়, ধামাকা শপিং পণ্য সরবরাহকারী ৬০০ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকার পণ্য নিলেও এ পর্যন্ত কোনো টাকা পরিশোধ করেনি।