যেভাবে বিশ্বের শীর্ষ বিলিয়নিয়ার ফুটবলার হলেন রোনালদো
মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই মার্কিন সাময়িকী, ফোর্বস-এ প্রকাশিত 'বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী ফুটবলার ২০২১' তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি তো বটেই, ছাড়িয়ে গেছেন ক্রীড়া জগতের আরও অনেক রথী-মহারথীকে। এই অর্জনের পেছনে গত ১২ মাসে সব মিলিয়ে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে।
কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে ধনী খেলোয়াড়দের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া পর্তুগিজ তারকার জন্য নতুন কিছু নয়। কারণ, তিনিই যে প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েছিলেন!
কিন্তু ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত এই খেলোয়াড় কিভাবে এত অর্থসম্পদের মালিক হলেন? তার টাকার উৎসই বা কি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ধরে মাল্টিমিলিয়ন ডলারের চুক্তি, রোনালদো নিশ্চিতভাবেই জানেন কিভাবে এই বিপুল পরিমাণ টাকার সমন্বয় করতে হয় কিংবা ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রত্যাবর্তন
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাথলেট, যার সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মিলিয়ে অর্ধবিলিয়নের বেশি অনুসারী রয়েছে। এই লেখাটি লেখার সময় পর্যন্ত রোনালদোর ফেসবুকে ১৪৮ মিলিয়ন, ইনস্টাগ্রামে ৩৪৮ মিলিয়ন এবং টুইটারে ৯৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন অনুসারী আছে।
চলতি গ্রীষ্মেই, ১২ বছর পর আবারও ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে 'ঘরের ক্লাব' ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরেছেন রোনালদো। আর এতেই হয়েছে বাজিমাত!
ফোর্বস জানিয়েছে, রোনালদো-ম্যানইউ চুক্তির অংকটা ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে তার বেতন ও বোনাসও রয়েছে।
সাত নম্বর জার্সির জাদু!
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে রোনালদো এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, এক যুগ পর ফিরে এসেও ভক্তদের মধ্যে দেখেছেন তার নামে সেই একই উন্মাদনা। ওল্ড ট্রাফোর্ডে বিশ্বস্ত ভক্তরা পুরনো দিনের মতোই হৃদয় দিয়ে বরণ করেছে তাদের ঘরের ছেলেকে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রোনালদোর জার্সি নম্বর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওল্ড ট্রাফোর্ডের বাইরে ছিল বিশাল লাইন। স্পোর্টবাইবেল জানিয়েছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা রোনালদোর নতুন ম্যানইউ জার্সি কিট বিক্রি করে রেকর্ড ৪৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
তার চাইতেও অবাক করা বিষয়, রোনালদোর জার্সি নম্বর '৭' ঘোষণার মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই বিপুল অংকের কেনাবেচা হয়!
ফোর্বস সূত্রে আরও জানা যায়, প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে রোনালদোর নতুন ম্যানইউ জার্সিই অনলাইনে সবচেয়ে দ্রুত বিক্রি হয়েছে।
অর্ধবিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করেন
ইনস্টাগ্রামে বেশ সরব ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ব্যক্তিগত কিংবা পেশাদারি জীবন নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করে থাকেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। কিন্ত আপনি কি জানেন, ইনস্টাগ্রামে প্রতিটি পেইড পোস্টের জন্য এক মিলিয়ন ডলার আয় করেন রোনালদো?
অর্থাৎ, রোনালদোই ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আয় করা তারকা।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রাম থেকেই বছরে ৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেন তিনি।
চলতি বছরের জুনে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন, রোনালদোর 'কোকা-কোলা কান্ড' থেকেই বুঝা যায়, তার ক্ষমতা কতখানি। এক প্রেস কনফারেন্সের সময়, টুর্নামেন্টের স্পন্সর, কোকাকোলার দুটি কোকের বোতল সরিয়ে দিয়ে পানির বোতল তুলে নেন রোনালদো। এ সময় দর্শকদের 'পানি পান করুন' বলে উৎসাহ দেন তিনি।
বলাইবাহুল্য, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঐ ঘটনায় কোকা-কোলা কোম্পানিকে বিশাল অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এর বদলে, পানি বাজারজাতকারী ব্র্যান্ডগুলোর সামনে সুযোগ তৈরি হয়। গোল ডটকম সূত্র জানায়, পানি বাজারজাতকারী ব্র্যান্ড 'ইভিয়ান' রোনালদোর এই বার্তাকে বিশ্বব্যাপী প্রচার করে। একই সাথে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাদের অ্যান্টি-সুগার প্রচারণা চালায় এবং পানি খাওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
নাইকির সাথে আজীবন চুক্তি
স্বনামধন্য ব্র্যান্ড নাইকির সাথে রোনালদোর আজীবন চুক্তি তার ব্যাংক-ব্যালেন্স ফুলেফেঁপে ওঠার পেছনে বড় অবদানই রাখে বৈকি!
২০১৬ সালে নাইকির সাথে পার্টনারশিপ শুরু করেন রোনালদো। রোনালদোর আগে মাত্র দুজন তারকার সাথে আজীবন চুক্তি করেছে নাইকি। সেই দুই ব্যক্তি হলেন, লেব্রন জেমস এবং মাইকেল জর্ডান।
ফোর্বস জানিয়েছে, নাইকির সাথে চুক্তি বাবদ ১ বিলিয়ন ডলার পেয়েছেন রোনালদো।
ইনভেস্টোপিডিয়া সূত্র অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোনালদোর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতাকে আগভাগেই বুঝতে পেরেছিল নাইকি। রোনালদোকে 'মেগা-ইনফ্লুয়েন্সার' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এও উল্লেখ আছে, রোনালদোর কারণে এক বছরে নাইকির আয় ৪৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!
এর বাইরেও, ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড 'সিআরসেভেন' এবং হোটেল ব্যবসাসহ বহুমুখী বিনিয়োগের মাধ্যমেও রেকর্ড পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার।
- সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট