অকাস: যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শঙ্কা নাকি সম্ভাবনা?
মধ্য সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ত্রিদেশীয় নিরাপত্তা জোটের ঘোষণা যেটাকে বিশ্লেষকরা তিনদেশের নামের আদ্যক্ষরে A(ustralia)UK-US তথা অকাস বলছেন পুরো বিশ্বকে চমকে দেয়। এর ফলে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সাবমেরিন ক্রয়ের চুক্তিটি অস্ট্রেলিয়া বাতিল করে। পরপরই ফ্রান্সের ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শীর্ষ ফরাসি কূটনীতিকরা তিন দেশের বিষোদগার করেন, ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো কূটনৈতিক ভাষার ধার না ধেরে এটাকে আমেরিকার 'নৃশংস' আচরণ আর অস্ট্রেলিয়ার 'পিছন থেকে ছুরি মারা' বলেই অভিহিত করেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদেরও ডেকে পাঠান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাঁকো, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফ্রান্সের ২৪০ বছরেরও অধিক পুরনো কূটনৈতিক সম্পর্কে নজিরবিহীন। এ থেকেই বুঝা যায় ফ্রান্স তাদের 'পরীক্ষিত পুরনো মিত্রদের' পিছন দরজা দিয়ে এসে মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ায় কতটা ক্ষিপ্ত হয়েছে।
আর হবে নাই বা কেন! অকাসের ফলে ফ্রান্সের যে শুধু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা নয়। ফ্রান্স সাবমেরিন চুক্তির মধ্য দিয়ে অন্তত ৫০ বছরের সামরিক সক্ষমতা আদানপ্রদানের পরিকল্পনায় ছিল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাঁকো এই চুক্তির পিছনে বেশ ভালো রকমের 'রাজনৈতিক পুঁজি' বিনিয়োগ করেছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন এটা আর দশটা অস্ত্র চুক্তির চেয়ে বেশি কিছু হবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফ্রান্সের কর্তৃত্বের সুযোগ হিসেবে দেখেছেন এই চুক্তিকে। চুক্তির পর ম্যাঁকো এটাকে সমভাবাপন্ন রাষ্ট্রসমূহের কৌশলগত জোট বলেও অভিহিত করেছিলেন! এমনকি কিছুদিন আগেই চীন-অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের সময় ফ্রান্স অস্ট্রেলিয়ার পক্ষাবলম্বন করে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতার সমতা বজায় রাখতে ফ্রান্স বদ্ধপরিকর বলে ঘোষণা দেয়। সে জায়গা থেকে 'কৌশলগত বন্ধু' অস্ট্রেলিয়ার সাবমেরিন চুক্তি বাতিল ফ্রান্স ও ম্যাঁকোর মুখে চপেটাঘাতের মতোই। ২০২২ এর নির্বাচনকে সামনে রেখে ফ্রান্সের এমন কূটনৈতিক পরাজয় ম্যাঁকোর উপর ভোটারদের আস্থা কমাবে খুব স্বাভাবিক। ভোটারদের আস্থা অর্জনে জাতীয় স্বার্থে তিনি কতটা আপোষহীন সেটা 'প্রমাণ' করতেই হয়তোবা রাষ্ট্রদূত ডেকে পাঠানো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভার্জিনিয়া কেপের যুদ্ধজয়ের ২৪০ বছর পূর্তি উদযাপনে যোগদান থেকে বিরত থাকেন।
অকাস আসলে কী? প্রাথমিকভাবে এটি একটি সামরিক অস্ত্র চুক্তি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ তৈরির প্রযুক্তি সরবরাহ করবে। চুক্তির ঘোষণা আসার কয়েক ঘন্টা আগেই অস্ট্রেলিয়া ২০১৬ সালের ফ্রান্সের সঙ্গে ১২টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন ক্রয়ের চুক্তি বাতিল করে। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া তাদের বর্তমান কলিন্স শ্রেণীর সাবমেরিন বহরকে প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে। কিন্তু এটি নিতান্তই সামরিক চুক্তি নয় শুধু, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য ঠেকাতে তিন দেশের 'নির্দোষ' (!) কৌশলগত জোট হিসেবেই দেখা হচ্ছে এটিকে।
অস্ট্রেলিয়া ফরাসি সাবমেরিন কেনার ৬৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিটি বাতিল করার পিছনে ফ্রান্সের সাবমেরিন তৈরিতে অসন্তোষজনক অগ্রগতি ও পরিবর্তিত নিরাপত্তা ও কৌশলগত পরিস্থিতিকে দায়ী করেছে। ফ্রান্সের তৈরি সাবমেরিনগুলো ২০৩০ সালের আগে অস্ট্রেলীয় নৌবহরে যুক্ত হবে না আর এ দীর্ঘ সময় নিজেদের সাগর চীন থেকে অরক্ষিত ও আক্রমণের হুমকিতে থাকবে। অস্ট্রেলিয়া মনে করছে গতানুগতিক ধারার ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী চীনা নৌবহরকে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট নয়। ২০১৬ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তির পর শুধু গত ৫ বছরেই চীনা নৌবহরে নতুন করে একটি অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ৩টি উভচর জাহাজ (একই সঙ্গে জলে ও স্থল সৈন্যদের সাহায্যে ব্যবহৃত হয়), কয়েক ডজন ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, কর্ভেট জাহাজ যুক্ত হয়েছে। চীনের সামরিক সক্ষমতা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে সাগরে চীন-অস্ট্রেলিয়া বিবাদের আশঙ্কা থেকেই অস্ট্রেলিয়া অকাস চুক্তিতে যায়। এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়া যে শুধু ন্যূনতম ৮টি পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন পাবে তাই নয়, অত্যাধুনিক ও অত্যন্ত শক্তিশালী বেশ কয়েকটি ধরনের ক্ষেপনাস্ত্রের প্রযুক্তিও পাচ্ছে।
অকাসকে দুই পশ্চিমা পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জন্য আপাতত বিজয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তার এশীয় মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা ও তারা যেন চীনকে মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে সেজন্য তাদেরকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করাকে কতটা গুরুত্ব দেয় সেটার উদাহরণ তৈরি করার সুযোগ এনে দিয়েছে এই চুক্তি। অন্যদিকে এই অঞ্চলে নতুন করে নজর দেওয়াটা ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাস্তবিক প্রকাশ। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য যে ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত বন্ধু এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যুক্তরাজ্যের গুরুত্ব বেশি সেটারও প্রমাণ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকা চীনের সঙ্গে সামরিক, রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইকে অগ্রাধিকার দিতে হিমশিম খাচ্ছে। জো বাইডেন তার দুই পূর্বসূরীর চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়ভাবে এশিয়ার দিকে নজর দেয়ার জন্য শুরু থেকেই কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তিবৃদ্ধি করতে ও চীনের আধিপত্য ক্ষর্ব করতে কতটা মরিয়া নিজেদের পারমাণবিক প্রযুক্তি যুক্তরাজ্যের বাইরে প্রথম অন্য কোনো দেশকে দেওয়াটা হয়তো সেটারই প্রমাণ। আর এব্যাপারে ফ্রান্সের উপর যে তাদের আস্থা নেই সেটাই ইঙ্গিত করে এই চুক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এশিয়ায় নিজেদের অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন, চীনের পক্ষ ও বিপক্ষের দেশগুলোর মধ্যে স্পষ্ট রেখা টেনে দেয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে এই চুক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক মিত্র জাপান ও ভারত ইতিমধ্যে এই চুক্তিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে। চীনের সঙ্গে টানাপোড়েনে নতুন সাথী পেয়ে দুইদেশই এ কান-ও কান বিস্তৃত হাসি দিচ্ছে নিশ্চয়ই। অকাস চুক্তির পরপরই ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া মিলে গঠিত কোয়াড হুঁট করে সক্রিয় হওয়া ও এই চার দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রথম সশরীরে বৈঠকে মিলিত হওয়া চীনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবে নিশ্চিতভাবে। যদিও ভারত কোয়াডের সঙ্গে অকাসের যোগসূত্রের সম্ভাবনা নাকচ করেছে ও যুক্তরাষ্ট্র অকাসে জাপান, ভারতের সংযুক্তির সম্ভাব্যতা উড়িয়ে দিয়েছে। চীনের সঙ্গে চলমান সীমান্ত সংঘাত ও নিজেদের ঘনিষ্ট মিত্র ফ্রান্সের এই চুক্তিতে ক্ষতির কথা মাথায় রেখে আপাতত নীরব দর্শকের ভূমিকায়ই থাকবে ভারত।
আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তির সঙ্গে চীনের কোনো সংযোগ না থাকলেও এটা যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চীন ঠেকাও নীতির প্রতিফলন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! প্রত্যাশিতভাবেই চীন এই চুক্তিকে ভালোভাবে নেয়নি। আঞ্চলিক শান্তি ও সংহতি নষ্টের পাঁয়তারা বলছে। এটা অবশ্য স্পষ্ট নয় যে এই চুক্তি চীনের দ্বারা তৈরি নিরাপত্তা সংকট মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে কিনা কিংবা এত অর্থব্যয়ের উপযোগিতা মিটাবে কিনা! ইংরেজি ভাষাভাষীদের চীনবিরোধী এই জোট গালভরা শিরোনাম পেলেও, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যান্য মিত্রদের (যেমন ফ্রান্স) সঙ্গে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যখন তার মিত্রদের বিশ্বস্ততার খুবই প্রয়োজন সেসময়ে অকাস চুক্তি বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক বিশ্বাসঘাতকতা ন্যাটোতে ফ্রান্সের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত বিরাগ সৃষ্টি করতে পারে এবং চীনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের সহযোগিতা পাওয়া কিছুটা কঠিন করে তুলতে পারে। এই চুক্তি দীর্ঘমেয়াদী পারমাণবিক অস্ত্র অপসারণ স্বার্থের সঙ্গে আপোষ করে স্বল্পমেয়াদী সামরিকবাদ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রাখে। এটি চীনের সামরিক সম্পরসারণবাদের প্রত্যুত্তর হয়তো হয়েছে কিন্তু বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্য তৈরিতে কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
উদাহরণ হিসেবে তাইওয়ানের কথাই বলা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জন্য হাজার হাজার মাইল দূর থেকে তাইওয়ানে শক্তি প্রয়োগ যতটাই কঠিন ও অসম্ভব, তাইওয়ান প্রণালীর ১০০ মাইল দূরে থাকা চীনের জন্য ততোটাই সহজ ও সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমানের পক্ষে এতোদূর উড়ে এসে চীনের শক্তিশালী নৌ, বিমান বাহিনী ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পর্যদুস্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব না! আর মিত্র দেশগুলোর জাহাজের সংখ্যা ও সক্ষমতা এতো নগণ্য যে চীনা মিসাইলের সামনে দাঁড়াতেই পারবে না। অকাস চুক্তিও এই বাস্তবতা পরিবর্তন করে না। বরং প্রান্তিক লাভ খুব কম এবং খুব সময়সাপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত নতুন অস্ট্রেলীয় সাবমেরিন সমুদ্রে নামাতে অন্তত এক দশক লাগবে। এদিকে, চীন ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নৌবহরে যুক্ত করবে এবং ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন দ্রুত নির্মাণের পাশাপাশি উৎপাদন সুবিধা বাড়াচ্ছে। এর মানে এই যে আমেরিকা ও তার মিত্রদের দূরবর্তী ঘাঁটি এবং বন্দর থেকে ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে চীনকে প্রতিরোধ করার আশা করা উচিত না। তাইওয়ানে যে কৌশলের কথা ভেবেছিল উত্তর অস্ট্রেলিয়া থেকে উড্ডয়নকারী মার্কিন বোমারু বিমান কিংবা অকাস সাবমেরিন সেভাবে ভাবলে চীনের আধিপত্যবাদে একটা টোকাও পড়বে না। আর এখন পর্যন্ত অকাস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী তিনটি দেশের হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা ও সক্ষমতা এরচেয়ে বেশি দেখাও যাচ্ছে না।
এশিয়ায়, চুক্তিটি কোয়াডকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। জাপান, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া স্বাস্থ্যখাত থেকে সামরিক অনুশীলন পর্যন্ত বিষয়গুলিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করতে ইচ্ছুক কিন্তু সরাসরি চীনকে মোকাবিলা করতে অক্ষম ও অনিচ্ছুক। কোয়াডের সাম্প্রতিক বৈঠকে চীনের হস্তক্ষেপের সম্মুখীন এশীয় দেশগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সাহায্যের প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি। চীনের সম্প্রসারণবাদে হুমকির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো অকাস চুক্তির ফলে যে সামরিক শক্তি প্রতিযোগিতা শুরু হবে সেটার মাঝখানে পড়তে চাইবে না এবং তাদের আমেরিকাকে সহযোগিতা করার সম্ভাবনা কম কারণ তারা তাদের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবেশী বেইজিংকে রাগাতে চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অকাস চুক্তি তাই সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কাও নিয়ে আসবে।
- লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
- ইমেইল: [email protected]