ধর্মঘট স্থগিতের পর স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করায় সোমবার রাত থেকে পুরো দমে কন্টেইনার ডেলিভারি ও হ্যান্ডলিং শুরু হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়মিত কার্যক্রম স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে।
দু-একদিনের মধ্যে বন্দর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) অবশ্য শঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, ধর্মঘটের কারণে নভেম্বরে ৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশ ব্যর্থ হতে পারে।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করে পণ্যবাহী যানবাহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা ধর্মঘট স্থগিত করার পর সোমবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর ও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) ফের পণ্য পরিবহন শুরু হয়। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, ধর্মঘট স্থগিতের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। আর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।
ধর্মঘটের মধ্যে শুক্রবার সকাল থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার ৭০০ টিইইউ (টুয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) রপ্তানিমুখী কন্টেইনার ১৯টি ব্যক্তিগত আইসিডি স্থবির হয়ে পড়ে।
বন্দরের তথ্য অনুসারে, ধর্মঘট স্থগিত হওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ১১ টিইইউ। রোববার ডেলিভারি হয়েছিল ১ হাজার ৭১৩ টিইইউএস।
এছাড়াও ৯ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৫ হাজার ৪৭২ টিইইউএস। আগের হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২ হাজার ৪৭২ টিইইউএস।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, 'ধর্মঘট চলাকালেও কিছু কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছিল। তবে ধর্মঘট স্থগিতের পরপরই চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ডেলিভারি নিতে ট্রাক কাভার্ড ভ্যান প্রবেশ করতে থাকে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।'
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন্দরের ১২টি গেটেই পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এ কারণে নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে বন্দরের এনসিটি (নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল) গেটে পণ্য নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রার অপেক্ষায় থাকা কাভার্ডভ্যান চালক খায়রুল ইসলাম টিবিএসকে জানান, 'সোমবার রাতে রপ্তানিপণ্য নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসি। পতেঙ্গার ইনকনট্রেড ডিপোতে পণ্য পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার বন্দরে পৌঁছার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের বাধার কারণে প্রবেশ করতে পারিনি। পরবর্তীতে মঙ্গলবার সকালে বন্দরে পণ্য বোঝাইয়ের পর দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।'
ধর্মঘট স্থগিতের পর বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওযায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বন্দর আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলো।
আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার জানান, 'মঙ্গলবার জাহাজীকরণ শিডিউলে থাকা ৩০০ কন্টেইনার না নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছে ৪টি ফিডার ভেসেল। সোমবারও ১ হাজার ৪০০ কন্টেইনার না নিয়ে বন্দর ছেড়েছিল ৩টি জাহাজ।'