আগামী সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন সার্ভিস জেটি
চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন বিভিন্ন জাহাজের সুরক্ষা ও বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি আনতে চালু হচ্ছে নতুন সার্ভিস জেটি। এই জেটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩৫টি ভেসেল পরিচালনা করা হবে। ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২২ ফুট লম্বা সাইজের এই সার্ভিস জেটি আগামী ২০ ডিসেম্বর উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর আগে বন্দরের সার্ভিস জেটি থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ২০০৮ সালে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে অপরিকল্পিতভাবে সদরঘাট সহ কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন স্থানে এসব জাহাজের নোঙ্গর করা হতো। এর ফলে জরুরী প্রয়োজনে ভেসেলগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সময়ক্ষেপণ হতো। তাই নতুন এই সার্ভিস জেটি নির্মাণের ফলে এসব সংকট দূর হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের বারিক বিল্ডিং এলাকায় কর্ণফুলী নদীর পাড়ে ১ নম্বর জেটি এলাকায় নির্মিত হয়েছে এই সার্ভিস জেটি। এটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতুন ওহাব এ বারিক (জেভি)।
চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কাজে ব্যবহার হওয়া উদ্ধারকারী জাহাজ, টাগবোট, জরিপ জাহাজ, আউটার থেকে বন্দরের বার্থিং এ বিদেশী জাহাজগুলোকে আনার দায়িত্বে থাকা পাইলটদের বোট, ফায়ার ফাইটিং বোট, পানিবাহী ভ্যাসেলসহ প্রয়োজনীয় জাহাজগুলো এই ধরনের জেটি ব্যবহার করে।
আকারভেদে এ ধরনের ৩৫টি ভেসেল রয়েছে বন্দরের মালিকানায়। বিশ্বের উন্নত বন্দরে সার্ভিস জেটি থাকলেও দেশের প্রধান এই বন্দরে গত ১৩ বছর ধরে ছিল না সার্ভিস জেটি। এতদিন পন্টুনসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধার মাধ্যমে সার্ভিস জেটির প্রয়োজন মেটানো হতো।
চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার টিবিএসকে বলেন, ১৩ নম্বর জেটি এলাকায় ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের সার্ভিস জেটি। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সেটি ২০০৮ সালে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এরপর ২০১৮ সালে নতুন সার্ভিস জেটি নির্মাণের জন্য ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রতুন ওহাব এ বারিক (জেভি) কে কার্যদেশ দেয় বন্দর। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয় এই সার্ভিস জেটির। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০ ডিসেম্বর সার্ভিস জেটি উদ্বোধনের দিন ধার্য করা হয়।
বন্দর সূত্র জানায়, এতদিন সার্ভিস জেটি না থাকায় বন্দরের মালিকানাধীন জাহাজগুলো কর্ণফুলী নদীর তীরে অপরিকল্পিতভাবে নোঙ্গর করা হতো। কোন দুর্ঘটনা কিংবা নিয়মিত অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য এসব জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছাতে সময়ক্ষেপণ হতো। গুনতে হতো অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়।
এই জেটিতে সাড়ে ৫ মিটার ড্রাফটের ১০০ মিটার লম্বা আকারের দুটি জাহাজ একসাথে বার্থিং করতে পারবে। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্যান্য বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাসের কাজেও এই জেটি ব্যবহার করা যাবে।
বন্দরের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, নতুন এই সার্ভিস জেটিকে ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে দুই হাজার ৬৫০ বর্গফুটের তিনতলা একটি অফিস ভবন, ৩ হাজার বর্গফুটের স্টিল কাঠামোর একটি ওয়্যারহাউস, ২ হাজার ১০০ কিউবিক মিটারের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পানির রিজার্ভার, ২২২ মিটার লম্বা ৮ ফুট উঁচু রিটেইনিং ওয়াল, রিভার ব্যাংক ও শোর প্রোটেকশন, ড্রেনেজ সিস্টেম, ৫০০ কেভির বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, ১০০ ফুট উঁচু সিগন্যাল টাওয়ার।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ২০ ডিসেম্বর নতুন সার্ভিস জেটি উদ্বোধনের পাশাপাশি ওইদিন বন্দরের উদ্ধারকারী জাহাজের বহরে কান্ডারি-৭ নামের নতুন একটি জাহাজও উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। দেশীয় জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্স এই জাহাজটি নির্মাণ করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, নতুন সার্ভিস জেটি বন্দরের নিজস্ব ভেসেল পরিচালনায় গতি আসবে। বন্দরের নিজস্ব জাহাজ সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি অন্যান্য বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাসেও ব্যবহার হবে এই জেটি।