আলোচিত মেজর সিনহা হত্যার রায় আজ
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার রায় আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারী)। রায় ঘিরে সকাল থেকে কক্সবাজার আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা
মেজর সিনহা হত্যা মামলার বাদী এবং নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া মামলার প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমাদের আশা আদালত হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে তাদের ভূমিকা অনুযায়ী শাস্তি দেবেন।"
আজ রায় ঘোষণার সময় সিনহার পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এ রায়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হোক যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।"
হত্যার ঘটনায় চার মামলা
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচদিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
গত বছরের ২৭ জুন প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু হয়।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি 'পরিকল্পিত ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ সদস্য হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। আসামিদের ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
অভিযোগপত্রে থাকা ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। গত বছরের ২৩ আগস্ট শুরু হয়ে আসামিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ১ ডিসেম্বর।
দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে অবশেষে গত ১২ জানুয়ারি আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
দ্রুততম সময়ে রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, "কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ৩৮ বছরের ইতিহাসে এ প্রথম এত দ্রুত কোন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে। মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে আমরা এ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে সক্ষম হয়েছি।"
১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিযুক্তরা সর্বোচ্চ শাস্তিই পাবে বলে তার প্রত্যাশা।
স্বল্প সময়ে সিনহা হত্যার রায় দেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্তের মতে, বাদীর দাবি, মামলার এজাহার, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অভিযোগপত্রের মধ্যে বিস্তর অমিল রয়েছে। তিনি বলেন, "আমরা আদালতকে বলেছি, কক্সবাজারে ইয়াবার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই ওসি প্রদীপ ও অন্যদের ফাঁসানো হয়েছে।"