সংশোধিত এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ কমছে স্বাস্থ্য খাতে
চলতি অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল, ১৭,৩০৭ কোটি টাকা। কিন্ত অর্থবছরের অর্ধেক সময় চলে গেলেও অর্থ ব্যয় হয়েছে খুবই কম। এ অবস্থায় সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ১৮.৭৯% কমানোর প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এডিপির ১৫ খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ কমছে স্বাস্থ্য খাতে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের মাধ্যমে এ খাতের বরাদ্দের অর্থ ব্যয় হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৯.৮৪% অর্থ ব্যয় করেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ব্যয় করেছে বরাদ্দের ২২% অর্থ।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, কৃষি, পরিবহন এবং যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষাসহ সব খাতেই বরাদ্দ কমছে সংশোধিত এডিপিতে। তবে উল্লেখযোগ্য হারে ১০ শতাংশের চেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি (১৪%), শিক্ষা খাতে (১০%)। এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ কমছে ৯.৪২%।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান মো. খন্দকার আহসান হোসেন বলেন, সংশোধিত এডিপি প্রণয়ণে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে চাহিদা চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রকল্প ভিত্তিক বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব, বাস্তবায়ন হার এবং অর্থায়নের যোগান পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সবভিত্তিক খসড়া বরাদ্দ প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছে। খাতভিত্তিক এ বরাদ্দ প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি)। আগামী মার্চে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসি সভাটি অনুষ্ঠিত হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যে সব খাতে গুরুত্ব দিয়ে অর্থ ব্যয় বাড়ানোর দরকার ছিল সেসব খাতে অর্থ ব্যয় বাড়ছে না। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে গুণগতভাবে অর্থ ব্যয় বাড়ানোর দরকার ছিল। কিন্ত তা বাড়েনি। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অর্থ ব্যয় সব চেয়ে কম। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সক্ষমতা বাড়েনি। এ কারণেই সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হয়।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বরাদ্দ এমনিতে কম থাকে। তার মধ্যে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাও ব্যবহার করতে পারে না। স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আবার বৈদেশিক সহায়তা পুষ্ট প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করতে পারে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এসব কারণে অর্থবছরের শেষের দিকে এসে সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আরো কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খাতে বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা ব্যবহার করতে না পারার কারণে এসব খাতে বরাদ্দও বাড়ানো যাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে বড় ধরণের সংস্কার কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, মূল এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে যে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, সংশোধিত এডিপিতে তা অপরিবর্তীত থেকে যাচ্ছে। বরাদ্দ কমছে বৈদেশিক সহায়তা থেকে। সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ১৭,৭৭৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে মূল এডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ ছিল ১৩৭,৩০০ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অর্থায়নের বরাদ্দ ছিল ৮৮,০২৪ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের নানা ধরণের শর্তের কারণে বৈদেশিক সহায়তা পুষ্ট প্রকল্পে আগ্রহ কম থাকে বাস্তবায়নকারী সংস্থারগুলোর। অন্যদিকে বাস্তবায়নে জটিলতা কম থাকে বলে সরকারি তহবিলের অর্থ থেকে বেশি বরাদ্দ চায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এর প্রভাব পড়েছে সংশোধিত এডিপিতে।