ওসমানী উদ্যানের সংস্কার কাজ কবে শেষ হবে জানে না কেউ
- সংস্কারের ৭০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি
- ১০ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫ বছরে তা হয়নি
- সংস্কার কাজ কবে শেষ হবে তা বলতে পারছেন না সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা
- সময়সীমা চারবার বাড়ানো হয়েছে, প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ
- ডিএসসিসি আগের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে এবং নতুন করে দরপত্র আহ্বান করবে
সংস্কার কাজের জন্য দীর্ঘদিন জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ থাকা ওসমানী উদ্যানের কাজ কবে শেষ হবে এবং নগরবাসীর জন্য কবে উন্মুক্ত করা হবে, তা নিদিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।
সংস্কার কাজ মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ দীর্ঘ প্রায় ৫ বছরে ওসমানী উদ্যানের ৭০ শতাংশের কাজও শেষ হয়নি।
রফিকুল আলম (৫০), গুলিস্তান এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমরা ছোটবেলা থেকেই বন্ধু-বান্ধব মিলে এই উদ্যানে খেলাধুলা করতাম,আড্ডা দিতাম, কিন্তু সংস্কারের কথা বলে উদ্যোগটিতে আজ ৫ বছর ধরে এখানে ঢুকতেও পারছি না আমরা।"
আমান উল্লাহ (৫৫) নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, "আগে তো পরিবেশ খারাপ থাকলেও অন্তত ঢুকে একটু গাছের নিছে বসতে পারতাম, কিন্তু এখন গরমে একটু আশ্রয়ও নিতে পারছি না।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০১৭ সালে 'জল সবুজের ঢাকা' প্রকল্পের আওতায় ২৯ একরের ওসমানী উদ্যানটিকে সংস্কার করার উদ্যোগ হাতে নেন। উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের মধ্যে ছিল ওয়াকওয়ে, লেক উন্নয়ন, বাউন্ডারি ওয়াল, ল্যান্ডস্কেপিং ওয়ার্ক ফুডকোর্ট, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি ও খেলাধুলার অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, কাজ শেষ করার প্রাথমিক সময়সীমা ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তীতে ২ বার সময়সীমা বাড়িয়ে যথাক্রমে ২০২০ সালের জুন ও ২০২১ সালের জুন মাস নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ তা আবার ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সংস্কার ব্যয় হিসেবে প্রথমে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও পরে তা বাড়িয়ে ৮৬ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু নতুন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়িয়ে পানি নিষ্কাশন, পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন যোগ করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১০০ কোটি টাকার ওপর।
পার্কটির সংস্কারের কাজ করছে 'দি বিল্ডার্স লিমিটেড' ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উদ্যানের কাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়,বর্তমানে মাত্র তিন-চার জন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছেন পার্কের ভিতরে। উদ্যানটির তিনটি গেইটই বন্ধ, কিন্ত চতুর্পাশের টিনের বেড়ার বেশ কয়েক জায়গায় ভেঙ্গে মাদসসেবীদের আড্ডা ও আনাগোনা শুরু করেছে।
নির্মাণ শ্রমিক জয়নাল আবেদীন টিবিএসকে বলেন, "আমি কন্ট্রাক্টরের কাছে ১৬ হাজার টাকা পাওনা আছি, আমার মতো এরকম ১৫-২০ জন শ্রমিকের কাজের টাকা পাওনা আছে। টাকা উদ্ধারের জন্য এখনো কাজে আসি। না হয় আর আসতাম না।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্য বিল্ডার্সের লিমিটেডের এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "সিটি করপোরেশনের টাকা ছাড়া কাজ এগাচ্ছে না, ফলে কাজ শেষও করা সম্ভব হচ্ছে না।"
ঐ কর্মকর্তা আরও বলেন, "আমার কন্ট্রাক্টর আগের মেয়র সাঈদ খোকনের লোক। নতুন মেয়র দায়িত্ব পাওয়ার পর এ কন্ট্রাক্টরের অনেক কাজ-বিল আটকে গেছে, কাজেরও অনেক গতি কমে গেছে। সব মিলিয়ে এখনো ৬০-৭০ শতাংশের কাজ শেষ হয়নি।"
কোনোভাবেই আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
উদ্যানটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন টিবিএসকে বলেন, "দীর্ঘদিন সংস্কার কাজে পার্কটি বন্ধ থাকায় আশেপাশের বাসিন্দারা যারা সকাল-বিকালে পার্কটিতে হাঁটাহাঁটি করতে তারা এখন বাধ্য হয়ে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে যাচ্ছেন। আমরা কেউ জানি না কবে নাগাদ পার্কটির কাজ শেষ হবে।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা-১, মেরীনা নাজনীন টিবিএসকে বলেন, "আগের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে তারা ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে কিন্তু আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখবো সত্যিকারে কত শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "কাজের নিম্নমান ও দেরির কারণে ইতোমধ্যে আগের প্রতিষ্ঠানের সাথে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিল করেছে।"
নতুন করে ট্রেন্ডারের বিল উত্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ট্রেন্ডার আহবান করার পর নতুন প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে, তবে কবে নাগাদ কাজ শেষ করা হবে তা এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি।"