কলম্বো বন্দরের সংকট: পণ্য পরিবহনে বিকল্প রুটে শিপিং লাইনগুলো
শ্রীলঙ্কায় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় কলম্বো বন্দরের বিকল্প রুটে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন করছে শিপিং লাইনগুলো। সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখতে শিপিং লাইনগুলো কলম্বোর পরিবর্তে সিঙ্গাপুর, ভারত সহ অন্যান্য বন্দরে পণ্য খালাস শুরু করেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটেও রপ্তানি পণ্যের বুকিং কমে গেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়ছে জাহাজ। ভবিষ্যতে এই রুটে রপ্তানি পণ্য আরো কমে যাবে বলে ধারণা ফিডার ভ্যাসেল অপারেটরদের।
শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক সহিংসতায় গত ১০ মে কলম্বো বন্দরের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনায় কলম্বো বন্দরে নোঙ্গর করতে না পেরে মেডিটেরিয়ান শিপিং কোম্পানি- এমএসসির ৫টি মাদার ভেসেল ভারতের এন্নোর বন্দরে নোঙ্গর করে।
এমএসসির হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসাইন চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের কোম্পানির ৫টি মাদার ভেসেল ভারতের দিকে ডাইভার্ট করেছি। এসব জাহাজে বাংলাদেশ এবং ভারতের আমদানি কার্গো রয়েছে। সেখান থেকে আমরা পণ্য গন্তব্যে পাঠিয়ে দিচ্ছি। পণ্যগুলো কলম্বো বন্দরে নামার কথা ছিলো। চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে এমএসসির ছয়টি ফিডার ভেসেল চলাচল করে।'
কর্ণফুলী গ্রুপের মালিকানাধীন এইচআর লাইন চারটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে পরিচালনা করে। ৪টি ফিডার ভ্যাসেলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাসে মোট ৮টি ভয়েজ পরিচালনা করা হয়। প্রতি মাসে ৮ হাজার ৫০০ থেকে ৯ হাজার কন্টেইনার পরিবহন করে জাহাজগুলো। তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক মন্দা এবং সর্বশেষ রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে এই রুটে পণ্য পরিবহন প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।
এইচআর লাইন-এর নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলা বলেন, এমভি এইচআর ফারহা জাহাজটি ১৫ মে কলম্বোর উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাবে। জাহাজটিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ কন্টেইনার পরিবহন করা হয়। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৬০০ কন্টেইনার রপ্তানি পণ্য বুকিং হয়েছে।
এইচ আর লাইন চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর-পোর্ট কেলাং- চট্টগ্রাম রুটে আরো দুটি কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনা করে।
চট্টগ্রাম বন্দরে গভীরতা কম থাকায় ৯ দশমিক ৫ মিটারের বেশি গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারেনা। তাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার ভেসেলে করে প্রথম ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর যেমন শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেগুলো মাদার ভেসেলে (বড় জাহাজে) করে ইউরোপ-আমেরিকার গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়। একইভাবে কন্টেইনারবাহী আমদানি পণ্যও ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। যদিও সম্প্রতি সরাসরি চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। তবে সেটি খুবই সীমিত পরিসরে।
শিপিং খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৪০ শতাংশ চট্টগ্রাম থেকে কলম্বো বন্দর ব্যবহার করে পরিবহন করা হয়। বাকী ৬০ শতাংশ পণ্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্টকেলাং এবং তানজুম পেলিপাস এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। কলম্বো বন্দরে চলমান সংকটের কারণে এখন সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং সহ ভারতের বন্দরের দিকে ঝুঁকছে মেইন লাইন অপারেটরগুলো।
এই রুটে ফিডার ভ্যাসেল পরিচালনাকারী শিপিং লাইনগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেইন লাইন অপারেটরগুলো কলম্বোর বিকল্প রুট খুঁজছে। কলম্বো বন্দরের বদলে সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং সহ অন্যান্য ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর ব্যবহার করছে। অনেকেই ভারতের কৃষ্ণাপত্তনাম বন্দর ও অন্যান্য বন্দর ব্যবহারের কথা ভাবছে। ইতোমধ্যে মেইন লাইন অপারেটরগুলো ফিডার ভেসেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৃষ্ণাপত্তনাম বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী জানান, শ্রীলঙ্কার চলমান সহিংসতায় নির্বিঘ্নে পণ্য পাঠানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ক্রেতারা পণ্য নিতে বিকল্প রুট যেমন সিঙ্গাপুর, চীন সহ অন্যান্য দেশের বন্দর ব্যবহার করছে।