উন্নয়ন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিন, বিচক্ষণতার সাথে ব্যয় করুন: প্রধানমন্ত্রী
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় মন্ত্রণালয়গুলোকে উন্নয়ন প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিতে এবং সরকারি তহবিল বিচক্ষণতার সাথে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সক্ষম হওয়ার জন্য সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে তা কমিয়ে আনতে হবে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদনের জন্য অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলার সময় তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপে এমন কিছু দেশ রয়েছে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ১৭ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি চলছে। সেসব দেশে একবারে এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল কেনার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুদ্রাস্ফীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮ শতাংশের বেশি এবং তা ১০ শতাংশে পৌঁছাবে।
এতে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এগুলোর প্রভাব আমাদের ওপরও আসবে। আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে ইতোমধ্যেই।"
পরিবহনের খরচ [নৌযান ভাড়া] বেড়েছে বলেও যোগ করেন তিনি।
তিনি জনগণকে সবকিছু ব্যবহারে কঠোরতা ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার আহ্বান জানান।
"আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে [দেশের] প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে এবং এ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে," বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশীয় চাহিদা মেটাতে দেশের উর্বর জমি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
"আমি সবাইকে চাষাবাদ ছাড়া এক ইঞ্চি জমিও খালি না রাখার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা নিজেদের জন্য খাদ্য তৈরি করব এবং অন্যদেরও সাহায্য করব আমাদের মানুষকে সেভাবে অনুপ্রাণিত করতে হবে," তিনি বলেন।
মঙ্গলবার পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে এনইসি।
ঢাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন।
এডিপির বরাদ্দ অনুযায়ী, দেশের পরিবহন খাত বরাদ্দ পাচ্ছে ৭০ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পাচ্ছে ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা।
সরকার নিজস্ব সম্পদ থেকে প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা (৬২.২১ শতাংশ) প্রদান করবে এবং প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা (৩৭.৭৯ শতাংশ) বিদেশি উৎস থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসাবে সংগ্রহ করা হবে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২ অর্থবছর) মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪.১৪ কোটি টাকা যা পরবর্তীতে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নেমে আসে।
২০২৩ অর্থবছরের নতুন এডিপি চলমান অর্থবছরের আরএডিপি থেকে প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি।