শত কোটি টাকা ঋণ শোধ না করে পালাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর
বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের শত কোটি টাকা ঋণ শোধ না করে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম। গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই ব্যবসায়ীকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ৮টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ ১৩টি মামলা রয়েছে।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরকে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে তাকে আদালতে পাঠাই। সংশ্লিষ্ট আদালত জামিন শুনানি শেষে ওই ব্যবসায়ীকে জামিন দিয়েছে।'
আদালতের তথ্যমতে, ঋণ খেলাপি ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে শনিবার আদালতে হাজির করা হয়। আসামী পক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করলে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শাহরিয়ার ইকবাল তার জামিন মঞ্জুর করেন। মূলত তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের দায়ের করা মামলাগুলো জামিনযোগ্য হওয়ায় আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন।
তবে বিদেশে পলায়ন ঠেকাতে তার পাসপোর্ট আদালতে জমা রাখার জন্য একটি আবেদন জমা দিয়েছেন ব্যাংকের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা। আদালত সেই আবেদনের উপর শুনানির দিন ধার্য রেখেছেন আগামীকাল রোববার। তাছাড়া আদালতের দেয়া জামিন আদেশে আসামিকে রোববার হাজিরার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে ব্যাংকের আইনজীবী এ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান জানান, 'মামলাটি যেহেতু জামিনযোগ্য তাই আদালত জামিন দিয়েছেন। কিন্তু আমরা আসামির পাসপোর্ট জব্দ রাখার জন্য একটি আবেদন জমা দিয়েছি আদালতে। বিচারক সেই আবেদনের উপর শুনানির দিন ধার্য রেখেছেন রোববার।'
পাওনাদার ব্যাংকের তথ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে আবাসন, অটো ব্রিকসসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করে আসছেন সুপার প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। আবাসন ও ইটের ব্যবসা করতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসার লাভের টাকায় ব্যাংকের ঋণ শোধ না করে জমি কিনেছেন এবং ভোগবিলাস করেছেন। দীর্ঘদিনেও ব্যাংকের টাকা শোধ না করায় সংশ্লিষ্ট তিন ব্যাংকই এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অর্থঋণ ও এনআই অ্যাক্টের ১৩টি মামলা দায়ের করেন। এরমধ্যে এনআই অ্যাক্টের ১১টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারু পরোয়ানা রয়েছে।
মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক হাটহাজারী শাখার ৫০ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৬ কোটি টাকা ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি ব্যাংক ও এলাকার ব্যবসায়ীদের মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে প্রায় শত কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। হাটহাজারী এলাকায় তার নির্মাণ করা মার্কেটে দোকান ও ফ্ল্যাট বিক্রি করলেও বহু ক্রেতাকে ফ্ল্যাট ও দোকান বুঝিয়ে না দিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হাটহাজারী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালামত উল্লাহ বলেন, 'ডায়মন্ড সুপার অটো ব্রিক ফিল্ড, সুপার সিটি ও কাশেম ট্রেডিংয়ের নামে ৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পাওনা শোধ না করায় তার বিরুদ্ধে আটটি চেকের (এনআই অ্যাক্ট) মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে সমন রয়েছে। তাকে দীর্ঘদিন খুঁজে না পাওয়ায় আমরা তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে অবগত করে রেখেছিলাম। এর প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।'
ন্যাশনাল ব্যাংক হাটহাজারী শাখার ব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ ফিরোজুর রহমান জানান, কাশেম ট্রেডিংয়ের নামে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। ব্যবসার জন্য টাকা নিলেও মূলত ব্যাংকের টাকা ও ব্যবসার টাকায় জমি কিনেছেন এই ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিনেও ঋণের টাকা শোধ না করায় তার বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্ট, অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।